ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে প্রাণ গেল ৬ জনের

ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে দমকা হাওয়াসহ ব্যাপক ঝড়-বৃষ্টি বয়ে যাচ্ছে দেশের উপকূল অঞ্চলে। রিমালের প্রভাবে বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী ও সাতক্ষীরা ও চট্টগ্রামে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২৭ মে) দুপুর পর্যন্ত এসব মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

বরিশালের রুপাতলী এলাকায় একটি ভবনের ছাদের দেয়াল ধসে খাবারের হোটেলের টিনের ওপর পড়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- লোকমান হোটেলের মালিক লোকমান ও কর্মী মোকসেদুর রহমান। সোমবার ভোরে এ ঘটনায় শাকিব নামে আরও এক হোটেলের কর্মী আহত হয়েছেন। তাকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নগরীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সুলতান মাহমুদ বলেছেন, ভোরে লোকমান, মোকসেদুর ও শাকিব টিনশেডের তৈরি হোটেলের ভেতরে ঘুমিয়ে ছিলেন। এ সময় বাইরে ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে পাশের তিনতলা ভবনের ছাদের দেয়ালের কিছু অংশ ধসে হোটেলের টিনের চালে উপর পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়।

বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিচুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বরিশাল নগরীর রুপাতলী এলাকায় লিলি পেট্রোল পাম্পের পাশে ভোর ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দুজনের মরদেহ এবং আহত অবস্থায় অপরজনকে উদ্ধার করেন।

ভোলা ভোলার লালমোহন উপজেলায় ঘর চাপায় মনেজা খাতুন (৫৪) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার ভোর রাতের দিকে উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় প্রচণ্ড বাতাসে নিজ ঘর ভেঙে পড়লে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এতে ঘটনাস্থলে ওই নারীর মৃত্যু হয়। তার পিতার নাম সিদ্দিক মাঝি। নিহতের পরিবারকে সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।

সাতক্ষীরা সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে রোববার (২৬ মে) সন্ধ্যায় শওকাত মোড়ল (৬৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। তিনি গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী গ্রামের মৃত নরিম মোড়লের ছেলে। গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নিহত শওকাত মোড়লের পুত্রবধূ আছমা খাতুন জানান, রোববার সন্ধ্যার দিকে তার শ্বশুর শওকাত মোড়ল স্ত্রীকে নিয়ে নাপিতখালী আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পথে রাস্তায় পড়ে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

পটুয়াখালী পটুয়াখালী কলাপাড়ায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের হাত থেকে ফুফু ও বোনকে রক্ষা করতে গিয়ে মো. শরীফ (২৭) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার দুপুরে ধূলাসর ইউনিয়নের কাউয়ারচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মৃত শরীফ অনন্তপাড়া এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শরীফের ফুপু মাতোয়ারা বেগম কাউয়ারচর এলাকায় বসবাস করেন। ওই বাড়িতে তার বোনও ছিল। দুপুর ২টার দিকে অনন্তপাড়া থেকে শরীফ তার বড় ভাই ও ফুফাকে নিয়ে বোন এবং ফুফুকে উদ্ধার করতে যায়। এ সময় সমুদ্রের পানিতে কাউয়ারচর এলাকা ৫ থেকে ৭ ফুট পানিতে প্লাবিত ছিল। সাঁতার কেটে তারা ফুফুর ঘরে যাওয়ার সময় সমুদ্রের ঢেউয়ের তোড়ে শরীফ হারিয়ে যায়। পরে ঘণ্টাখানেক পর ওই স্থান থেকে শরীফের মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয়রা।

মহিপুর থানার ওসি আনোয়ার হোসেন তালুকদার জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

এছাড়া ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনের দেয়াল ধসে এক যুবক মারা গেছেন। সোমবার (২৭ মে) সকাল সাড়ে আটটার দিকে বায়েজিদের চন্দ্রনগর কলাবাগান এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত যুবকের নাম সাইফুল ইসলাম হৃদয় (২৬)। তিনি নির্মাণাধীন ভবন পাশ দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় ধসে পড়া দেয়ালের চাপা পড়ে। এতেই তার মৃত্যু হয়।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়’ রিমাল উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করে বর্তমানে খুলনার কয়রার নিকট অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমশ বৃষ্টিপাত বাড়িয়ে পরবর্তী ২-৩ ঘণ্টার মধ্যে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়বে। রিমালের সোমবার (২৭ মে) সকাল থেকে ঢাকায় দমকা হাওয়ার সঙ্গে তীব্র বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

এছাড়া ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে পশ্চিমবঙ্গেও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বাঁধ ভেঙে গেছে। প্রবল জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। কলকাতায় রাতে ঝোড়ো বাতাস বয়েছে এবং প্রবল বৃষ্টি হয়েছে। সোমবার সকালেও বিমান চলাচল বন্ধ ছিল। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখাতেও ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি। ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে সৃষ্ট দুর্যোগে কলকাতায় সাজিব নামে ৫১ বছর বয়সী এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।