আসছে শীত, বাড়ছে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা

মৃদু ঠাণ্ডা বাতাসে আগমনী বার্তা দিয়ে আসছে শীত। আর শীতের শুরু না হতেই হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা। প্রতিদিন যে হারে নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা  বাড়ছে, তাতে বাড়ছে উদ্বেগ। গেলো কয়েক বছরে দেশে নিউমোনিয়াজনিত জটিলতায় মৃত্যুহার কমলেও সম্প্রতি এ রোগে আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্য বেড়ে গেছে। নিউমোনিয়া মূলত ফুসফুসের প্রদাহজনিত রোগ। ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় বা শীতকালে এ রোগে সংক্রমনের সংখ্যা বাড়ে। সাধারণত শিশু ও বৃদ্ধরাই বেশি আক্রান্ত হয় নিউমোনিয়া।

দেশে শিশুমৃত্যুর যে কটি কারণ আছে, তার অন্যতম নিউমোনিয়া। এসংক্রান্ত জটিলতায় প্রতিবছর দেশে মারা যাচ্ছে প্রায় ২৪ হাজার শিশু। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, এ বছরের ১০ মাসে দেশে নিউমোনিয়ায় ২ লাখ ১৬ হাজার ৪২৬ শিশু আক্রান্ত হয়েছে। সেই হিসাবে দৈনিক দেশে গড়ে ৭০৯ জনের শরীরে রোগটি শনাক্ত হচ্ছে। গত বছর এ রোগে আক্রান্ত হয়েছিল ২ লাখ ৪ হাজার ৪১২ শিশু। তবে তাদের প্রায় শতভাগই নিউমোনিয়া প্রতিরোধে সরকারি টিকা নিয়েছে বলে জানা গেছে। 

চিকিৎসকরা মনে করেন, নিউমোনিয়ায় আগের চেয়ে মৃত্যুহার কমলেও এখনও সম্ভব হয়নি এ রোগ প্রতিরোধে টেকসই ব্যবস্থা। চিকিৎসকরা বলছেন, এটি সম্ভব হলে মৃত্যুহার কমে আসবে তিন শতাংশের নিচে। দ্রুত শনাক্ত করা গেলে এতে শতভাগ রোগী সুস্থ হওয়া সম্ভব। এছাড়া নিউমোনিয়া নির্মূল করতে প্রয়োজন সমন্বিত ব্যবস্থাপনা ও গবেষণা।

এজন্য প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসার প্রতি জোর দিয়ে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. কামরুজ্জামান বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে যারা চিকিৎসকের কাছে আসে, তাদের বেশিরভাগই সুস্থ হয়। এত শরীরে কোন প্রকার জটিলতার সৃষ্টি হয় না।

বাংলাদেশ পেডিয়াট্রিক পালমোনোলজি ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. প্রবীর কুমার সরকার বলেন, ‘৯০ দশকের কথা চিন্তা করলে বছরে এক লাখ শিশু মারা যেতো। আমরা আগেই এমডিজি লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছে যেতে পারলেও এসডিজিতে ২০২৫ সালের মধ্যে ৫ বছরের শিশু মৃত্যুর হার তিন শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার যে লক্ষ্য ছিল তা কিন্তু আমরা পারিনি। এক্ষেত্রে এখনও আমরা সাত-এ অবস্থান করছি।’
 
নিউমোনিয়া নির্মূলে সমন্বিত চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের পাশাপাশি কাজে লাগাতে হবে এ খাতে কাজ করা বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও। সারা দেশের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তা গবেষণার মাধ্যমে কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা গেলেই ঠেকানো সম্ভব এ রোগের প্রাদুর্ভাব।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মহিমা বেনজীর হক বলেন, এ বিষয়ে অনেক গবেষণা করতে হবে। একজন চিকিৎসক ১০ হাজার রোগীর দায়িত্বে থাকেন। ফলে তিনি পরিপূর্ণ সেবা দিতে পারেন না। এক্ষেত্রে কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মী বা মাঠ পর্যায়ে যারা স্বাস্থ্যকর্মী আছেন, তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।