মস্তিষ্কের রোগ নির্ণয়ে যুগান্তকারী প্রযুক্তি, কয়েক ঘণ্টায় মিলবে রিপোর্ট

মস্তিষ্কের টিউমারে আক্রান্ত হন বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর প্রায় ৭ লাখ ৪০ হাজার মানুষ। তাদের অর্ধেকের বেশি টিউমার যদিও ক্যানসারজনিত নয়, তবুও দ্রুত রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসা শুরু করা অত্যন্ত জরুরি। এবার গবেষকরা এমন একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন, যার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করতে সময় লাগবে সপ্তাহ নয় শুধু কয়েক ঘণ্টা। 

সাধারণত টিউমার ধরা পড়লে অস্ত্রোপচারের সময় স্যাম্পল (টিস্যু নমুনা) নিয়ে মাইক্রোস্কোপে পরীক্ষা করা হয়। এতে টিউমারের প্রাথমিক ধরন বোঝা যায়। তবে নির্ভুলভাবে টিউমার শনাক্তে জেনেটিক (জিন-সংক্রান্ত) টেস্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাজ্যে এই রিপোর্ট পেতে কখনো কখনো ৮ সপ্তাহের বেশি সময় লেগে যায়। 

নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ‘ন্যানোপোর প্রযুক্তি’ ব্যবহার করে এই সময় অনেকটাই কমিয়ে এনেছেন। এই প্রযুক্তিতে একটি যন্ত্রে থাকা ক্ষুদ্র ছিদ্র (পোর) দিয়ে DNA বা জিনগত উপাদান অতিক্রম করানো হয়। DNA যখন ছিদ্রের মধ্য দিয়ে যায়, তখন একটি বৈদ্যুতিক প্রবাহ ব্যাহত হয়। DNA-এর গঠনভেদে এই ব্যাঘাতের ধরন আলাদা হয়, যা বিশ্লেষণ করে সফটওয়্যারের মাধ্যমে শনাক্ত করা যায় টিউমারের ধরন।

প্রতিটি নমুনার জন্য এই পরীক্ষার খরচ প্রায় ৪০০ পাউন্ড, যা প্রচলিত জেনেটিক টেস্টের সমান। এই পদ্ধতি ৩০টি পুরনো এবং ৫০টি নতুন স্যাম্পলের উপর প্রয়োগ করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ৯০% টিউমারের ধরন সঠিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এমনকি ৭৬% নতুন স্যাম্পল মাত্র ১ ঘণ্টার মধ্যেই নিশ্চিতভাবে শনাক্ত করা গেছে। অর্থাৎ অস্ত্রোপচারের সময়ই চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন- আরও আগ্রাসী অস্ত্রোপচার দরকার কিনা, নাকি সেটা লাভজনক হবে না।

গবেষক অধ্যাপক ম্যাথু লুস বলেন, দ্রুত রোগ নির্ণয় হলে অস্ত্রোপচারের সময়ই নির্দিষ্ট ওষুধ প্রয়োগ করা সম্ভব হতে পারে, যদি সেই ওষুধ আগে থেকেই মজুদ থাকে। এতে চিকিৎসার এক নতুন দিগন্ত খুলে যাবে। দ্রুত শনাক্তকরণ পদ্ধতি রোগীদের গবেষণাভিত্তিক ট্রায়ালেও দ্রুত অন্তর্ভুক্ত করতে সাহায্য করবে।

ইমপেরিয়াল কলেজের অনকোলজিস্ট (ক্যানসার বিশেষজ্ঞ) ড. ম্যাট উইলিয়ামস বলেন, এই প্রযুক্তি রোগীর উদ্বেগ কমাবে এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ তৈরি করবে। এখন মূল প্রশ্ন হলো, এই প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে কীভাবে চিকিৎসা পদ্ধতিই বদলে ফেলা যায়।