লাইফ সাপোর্ট কখন দেওয়া হয়?

একজন রোগী যখন শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে পারছে না নিজে থেকে। যে রোগী নিজে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে না পারবে, তার ক্ষেত্রে প্রথম কাজ হলো শ্বাসপ্রশ্বাস দেওয়া। যেটা হলো ভেন্টিলেশন। একেই আমরা বলি লাইফ সাপোর্ট।

হাসপাতালগুলোতে প্রায়ই গুরুতর রোগীদের অবস্থা স্থিতিশীল রাখতে লাইফ সাপোর্ট ব্যবস্থার প্রয়োজন হয়। তবে অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন, লাইফ সাপোর্ট আসলে কী, কীভাবে কাজ করে এবং কোন পরিস্থিতিতে একজন রোগীকে এই চিকিৎসার আওতায় নেওয়া হয়? চিকিৎসকদের মতে, লাইফ সাপোর্ট কোনো মৃত্যুর ইঙ্গিত নয়; বরং শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো যখন স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে না, তখন প্রযুক্তির সহায়তায় রোগীকে বাঁচিয়ে রাখার একটি জরুরি চিকিৎসা পদ্ধতি।

লাইফ সাপোর্ট কী?
লাইফ সাপোর্ট হলো এমন একটি মেডিক্যাল সাপোর্ট সিস্টেম যা শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যেমন হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনি বা মস্তিষ্ক, একটি নির্দিষ্ট সময় ঠিকভাবে কাজ না করলে তা সাময়িকভাবে প্রযুক্তির মাধ্যমে সাপোর্ট দেয়। এই সাপোর্ট রোগীকে বাঁচিয়ে রাখে এবং সময় দেয় যাতে চিকিৎসকরা মূল রোগের চিকিৎসা করতে পারেন।

লাইফ সাপোর্ট বিভিন্ন ধরনের হতে পারে—
ভেন্টিলেটর (শ্বাসপ্রশ্বাসের সাপোর্ট)
ডায়ালাইসিস (কিডনির কাজ সাময়িকভাবে চালানো)

ইসিজি মনিটরিং
ওষুধের মাধ্যমে হৃদযন্ত্র সচল রাখা
ইসিএমও (হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের বিকল্প সাপোর্ট)

রোগীকে কখন লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়?
চিকিৎসকেরা কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে লাইফ সাপোর্ট দেন। যেমন—
১. রোগী নিজে শ্বাস নিতে না পারলে
ফুসফুসের গুরুতর সংক্রমণ, নিউমোনিয়া, দুর্ঘটনা, পক্ষাঘাত, মস্তিষ্কে আঘাত—এসব ক্ষেত্রে রোগী নিজে শ্বাস নিতে অক্ষম হতে পারেন। তখন তাকে ভেন্টিলেটরে নেওয়া হয়।

২. রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে কমে গেলে
হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক বা বড় ধরনের অপারেশনের পর রক্তচাপ স্থিতিশীল রাখা জরুরি হয়। বিশেষ ওষুধের মাধ্যমে লাইফ সাপোর্টে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়।

৩. কিডনি কাজ না করলে
যখন কিডনি শরীরের টক্সিন ছাঁকতে পারে না, তখন ডায়ালাইসিস লাইফ সাপোর্ট হিসেবে কাজ করে।

৪. বড় ধরনের দুর্ঘটনা বা অপারেশনের পর
মস্তিষ্কে আঘাত, রোড অ্যাকসিডেন্ট, প্রসবজনিত জটিলতা, বড় সার্জারি—এসবের পর রোগীকে গুরুতর অবস্থায় লাইফ সাপোর্টে রাখতে হয়।

৫. জীবন-হুমকিপূর্ণ অবস্থা
যেখানে শরীরের যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ব্যর্থ হওয়ার ঝুঁকি থাকে, সেখানে লাইফ সাপোর্ট রোগীকে টিকে থাকার সুযোগ দেয়।

লাইফ সাপোর্ট মানেই মৃত্যু নয়
বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক রোগী লাইফ সাপোর্ট থেকে সুস্থ হয়ে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। বরং এটাকে বলা হয় “জীবন রক্ষার শেষ নিরাপত্তা-চক্র”—যা রোগীকে অতিরিক্ত সময় দেয়, যাতে চিকিৎসা কার্যকর হতে পারে।

লাইফ সাপোর্ট থেকে রোগীকে কখন সরানো হয়?
রোগীর অবস্থা ভালো হওয়ার পর
অঙ্গগুলো স্বাভাবিকভাবে কাজ শুরু করলে
চিকিৎসার প্রতিক্রিয়া ভালো দেখা গেলে

কখনও কখনও রোগীর অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক ও স্বজনদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লাইফ সাপোর্ট ব্যবস্থাও পরিবর্তন করা হয়।