বর্তমান যুগে সুস্থ থাকা এবং ফিটনেস বজায় রাখা মানুষের অন্যতম অগ্রাধিকার। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসের কারণে অনেকেরই ওজন বা মেদ বেড়ে যায়। আর ওজন কমানোর মিশনে নামলেই সবার আগে নজর যায় কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবারের ওপর। বাঙালি খাদ্যাভ্যাসে শর্করা মানেই মূলত ভাত ও রুটি। কিন্তু ওজন কমাতে বা মেদ ঝরাতে কোনটি বেশি কার্যকর তা নিয়ে অনেকের মনেই সংশয় থাকে।
ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। চলুন, পুষ্টিগুণ ও কার্যকারিতার ভিত্তিতে জেনে নেওয়া যাক ওজন কমাতে ভাত ও রুটির মধ্যে কোনটি এগিয়ে।
ভাত ও রুটি উভয়ই শরীরকে শক্তি জোগায় এবং দুটিরই মূল উপাদান কার্বোহাইড্রেট। তবে এদের প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং পুষ্টি উপাদানে কিছু পার্থক্য রয়েছে।
ভাত: এক কাপ রান্না করা ভাতে (প্রায় ১৫০ গ্রাম) ক্যালোরি থাকে প্রায় ১৯০-২০০ কিলোক্যালোরি। এতে ফাইবার বা আঁশ থাকে সামান্য (সাদা ভাতে ০.৫ গ্রাম)। ভাতে সোডিয়ামের পরিমাণ প্রায় শূন্য। তবে এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশি হওয়ায় এটি দ্রুত হজম হয়।
রুটি: একটি মাঝারি আকারের আটার রুটিতে (প্রায় ৬০ গ্রাম) ক্যালোরি থাকে ১২০-১৫০ কিলোক্যালোরি। এতে ফাইবারের পরিমাণ ভাতের চেয়ে অনেক বেশি (২-৩ গ্রাম)। আটা মাখার সময় লবণ ব্যবহারের কারণে এতে সোডিয়াম থাকে (১০০-১৫০ মি.গ্রা.)। এটি ভাতের তুলনায় ধীরে হজম হয়।
পুষ্টিবিদদের মতে, ওজন কমানোর দৌড়ে ভাতের চেয়ে আটার রুটি কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকে। এর কারণগুলো হলো-
১. উচ্চ ফাইবার ও তৃপ্তি: রুটিতে ভাতের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি ফাইবার থাকে। ফাইবার হজম হতে সময় নেয়, ফলে রুটি খাওয়ার পর দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকার অনুভূতি হয়। এতে বারবার খাওয়ার প্রবণতা কমে, যা পরোক্ষভাবে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
২. গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI): সাদা ভাতের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশি, যা খাওয়ার পর দ্রুত রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং শরীরে চর্বি জমার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে পারে। অন্যদিকে, রুটির (বিশেষ করে লাল আটার) জিআই কম, যা রক্তে শর্করা ধীরে বাড়ায় এবং ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
৩. ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণ: সমপরিমাণ কার্বোহাইড্রেট পেতে হলে ভাতের তুলনায় রুটিতে ক্যালোরি গ্রহণ কম হয়। দুটি রুটি খেলে যে তৃপ্তি পাওয়া যায়, তা এক কাপ ভাতের সমান ক্যালোরি হলেও পেট ভরা রাখতে রুটি বেশি কার্যকরী।
অনেকের পক্ষে ভাত পুরোপুরি বাদ দেওয়া কঠিন। ওজন কমানোর ডায়েটে ভাত রাখতে চাইলে কিছু কৌশল অবলম্বন করা জরুরি:
চাল পরিবর্তন: সাদা চালের পরিবর্তে ব্রাউন রাইস বা লাল চালের ভাত খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতে ফাইবারের পরিমাণ সাদা চালের চেয়ে বেশি।
পোর্শন কন্ট্রোল: ভাতের পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে। থালায় ভাতের চেয়ে সবজি ও সালাদের পরিমাণ দ্বিগুণ রাখতে হবে।
সঠিক কম্বিনেশন: ভাতের সঙ্গে ডাল, মাছ বা মুরগির মাংসের মতো প্রোটিন এবং প্রচুর সবজি মিশিয়ে খেলে খাবারের গ্লাইসেমিক লোড কমে যায়, যা ওজন বৃদ্ধিতে বাধা দেয়।