পানীয় হিসেবে স্বাদ, গন্ধ এবং উপকারিতার কারণে কফি বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়। কফি শরীরকে চাঙা করে তোলে, শরীরে শক্তি বাড়ায় এবং কাজের স্পৃহা বাড়িয়ে দেয়। তবে মানুষভেদে কফি পান করার ধরনে ভিন্নতা রয়েছে। কেউ অতিরিক্ত দুধ-চিনিযুক্ত, আবার কেউ দুধ, চিনি ছাড়াই কফি পান করতে পছন্দ করেন। তবে চিনিযুক্ত কফি খেলে স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকারক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে ডায়াবেটিস, কার্ডিওভাসকুলার হৃদরোগসহ বেশকিছু রোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই চিনি ছাড়া কফি পানের স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলো অবশ্যই জানা উচিত।
১. ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়
হার্ভার্ড T.H-এর তথ্য অনুসারে, নিয়মিত কফি পান টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি 8 শতাংশ কমাতে সাহায্য করে। এটি অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষগুলির কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে ইনসুলিন তৈরি করে থাকে।
২. হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যাফেইন পান করলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়। Ochsner জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা বলছে, কফি খাওয়া হার্টের জন্য ভালো। তবে, ক্যাফেইন শুধুমাত্র সাহায্য করবে যদি এটি চিনি ছাড়াই পান করা হয়।
৩. স্মৃতিশক্তি উন্নত করে
আপনার যদি প্রায়ই ভুলে যাওয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে কফি পান করা উচিত। জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির দ্বারা পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কফি খাওয়া স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।
৪. ওজন কমাতে সাহায্য করে
ওজন কমানোর চেষ্টা করলে ডায়েটে চিনি ছাড়া কফি পান করা উচিত। ফুড সায়েন্স অ্যান্ড নিউট্রিশন জার্নালে ক্রিটিক্যাল রিভিউতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যাফিন সেবন বডির সামগ্রিক ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। এর ব্যবহার থার্মোজেনেসিস বাড়াতে সাহায্য করে, যা শরীরের শক্তি আউটপুট এবং বিপাক বাড়ায়।
৫. লিভারের ঝুঁকি কমায়
শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল লিভার। আমাদের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার বেশিরভাগটাই সম্পন্ন করে লিভার। যাদের ফ্যাটি লিভার, হেপাটাইটিসের সমস্যা আছে তাদের দুধ চা, দুধ কফি ও চিনিসহ কফি এড়িয়ে চলতে বলা হয়। যাঁদের ফ্যাটি লিভার রয়েছে তাদের প্রতিদিন চিনি ছাড়া কফি খাওয়া ভালো। ক্যাফেইন লিভার থেকে ক্ষতিকর উৎসেচক তৈরিতে বাধা দেয়।
৬. দাঁতের ক্ষয় রোধ করে
চিনি ছাড়া কফি পান করলে মুখের ব্যাকটেরিয়া কমে এবং দাঁতের ক্ষয়ের সম্ভাবনা কমে। জার্নাল অফ কনজারভেটিভ ডেন্টিস্ট্রিতে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, কোনো অ্যাডিটিভ ছাড়াই কফি পান করা দাঁতের ক্যারির ঝুঁকি হ্রাস করে।
৭. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে
উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, তাই এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। নিউট্রিয়েন্টস জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, কফি পান করলে রক্তচাপ কমতে পারে।
যাদের সম্পূর্ণরূপে কফি এড়িয়ে চলা উচিত
পরিমিত পরিমাণে চিনি দিয়ে বা চিনি ছাড়া কফি পান খুব উপকারী। তবে এতে থাকা ক্যাফেইন সবার জন্য সহনীয় নয়। এজন্য কিছু ব্যক্তিকে কফি খাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। সংবেদনশীল পেট বা হজমের সমস্যা রয়েছে এমন কারো কফি পান করলে সহজেই পেট জ্বালাপোড়া করতে পারে। এমনকি পেট ফোলাভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস এবং ডায়রিয়া হতে পারে। যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে তাদের কফি পান এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ এটি অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে এবং আরও জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।