এক পশলা হালকা বৃষ্টিতে বারান্দায় জমে থাকা স্বচ্ছ পানি দেখতে নিরীহ মনে হলেও, এটাই হতে পারে আপনার পরিবারের জন্য বিপদের সূচনা। কারণ, বর্ষাকাল মানেই ঢাকায় ডেঙ্গুর মৌসুম। কিন্তু একটু সতর্কতা, একটু সচেতনতা আপনার পরিবারকে ডেঙ্গুর ছোবল থেকে বাঁচাতে পারে।
ডেঙ্গু কীভাবে ছড়ায়?
ডেঙ্গু একধরনের ভাইরাসজনিত রোগ, যা ছড়ায় এডিস এজিপ্টাই নামক মশার মাধ্যমে। এই মশা সাধারণত দিনের বেলা কামড়ায়, আর পরিষ্কার জমে থাকা পানিতে ডিম পাড়ে। তাই সমস্যা হচ্ছে বাড়ির সেই টব, ফুলদানি, ফ্রিজের ট্রে, বা ছাদে ফেলে রাখা বালতির জমা পানি নিয়ে। যেখানে আপনার অজান্তেই জন্ম নিতে পারে ডেঙ্গুবাহি মশা।
যেগুলো এড়িয়ে চলা উচিত
- ফুলদানি, ফ্রিজ ট্রে, পিরিচ বা খোলা পাত্রে দিনের পর দিন পানি জমিয়ে রাখবেন না।
- ছাদে বা বারান্দায় পড়ে থাকা বালতি, টব, নারকেলের খোল – সব পরিষ্কার রাখুন।
- বাড়ির চারপাশে ঝোপঝাড় ও জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করুন।
কী করলে নিরাপদ থাকবেন?
নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
- প্রতিদিনই চোখ বুলিয়ে নিন বাড়ির চারপাশে কোথাও পানি জমেছে কি না।
- অন্তত সপ্তাহে একদিন ফেলে দিন জমে থাকা পানি, আর পাত্রগুলো রোদে শুকিয়ে নিন।
মশা তাড়ানোর ব্যবস্থা নিন
- দিনের বেলা বাইরে গেলে মশা তাড়ানোর লোশন বা স্প্রে ব্যবহার করুন।
- সন্ধ্যার আগেই জানালা–দরজা বন্ধ করুন, মশারি ব্যবহার করুন।
সঠিক পোশাক পরুন
- দিনে বাইরে গেলে ফুলহাতা জামা আর লম্বা প্যান্ট পরুন।
- গরম লাগলেও এটা আপনার সুরক্ষায় সহায়ক হবে।
প্রাকৃতিক প্রতিকার ব্যবহার করুন
- বাড়িতে লাগাতে পারেন তুলসী, পুদিনা বা লেবু গাছ।
- ল্যাভেন্ডার, লেমনগ্রাস বা ইউক্যালিপটাস তেল ব্যবহার করতে পারেন ঘরে।
ডেঙ্গুর উপসর্গ চেনা জরুরি
প্রাথমিকভাবে ডেঙ্গু সাধারণ জ্বর মনে হলেও, কিছু উপসর্গ দেখলেই সাবধান হন:
- জ্বর (১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি)
- চোখের পেছনে ব্যথা
- শরীরে র্যাশ বা দানা
- পেটব্যথা, বমি ভাব
- নাক বা মাড়ি থেকে রক্ত পড়া
- দুর্বলতা ও মাথা ঘোরা
এসব লক্ষণ দেখা দিলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নিজের ইচ্ছেমতো ওষুধ খাবেন না।
উপরতলার বাসিন্দারা সাবধান!
অনেকেই ভাবেন, এডিস মশা শুধু নিচের তলায় থাকে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই মশা ২০-৩০ তলা পর্যন্ত উড়তে পারে। তাই সবার জন্যই সমান সতর্কতা জরুরি।
সচেতনতা হোক সমষ্টিগত। নিজে সচেতন থাকুন, প্রতিবেশীকেও বলুন। বাড়ির চারপাশে যতক্ষণ পরিষ্কার না হবে, ততক্ষণ আপনি একা নিরাপদ নন। আপনার একটুখানি নজরদারিই রক্ষা করতে পারে একটি জীবন। ডেঙ্গু প্রতিরোধে আজ থেকেই ব্যবস্থা নিন। সূত্র: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ইউনিসেফ