দুর্ঘটনার পর শিশুর মানসিক আঘাত বা ট্রমা অনেক সময় নিঃশব্দ ভূমিকম্পের মতো ভেতরে ভেতরে ক্ষত তৈরি করে। আগুন লাগা, গাড়ি দুর্ঘটনা বা প্রিয়জনের মৃত্যু প্রত্যক্ষ করার মতো ঘটনা শিশুদের মনে গভীর ভয় ও ভীতি সৃষ্টি করতে পারে।
মার্কিন সংস্থা সিডিসি (CDC)–র তথ্য অনুযায়ী, জীবনের কোনো না কোনো সময়ে ৮০ শতাংশের বেশি শিশু ট্রমাটিক ঘটনার মুখোমুখি হয়। সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে এ ধরনের মানসিক আঘাত দীর্ঘমেয়াদে তাদের আচরণ, ঘুম, মনোযোগ ও আবেগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, শিশুরা সব সময় ভাষায় তাদের ভয় প্রকাশ করতে পারে না। তবে আচরণের মাধ্যমে ট্রমার উপস্থিতি বোঝা যায়। এরকম অবস্থায় ট্রমার লক্ষণগুলো বেশিরভাগ সময় শিশুর আচরণেই ধরা পড়ে।
শিশুদের ট্রমা কীভাবে বোঝা যায়
- হঠাৎ চুপচাপ হয়ে যাওয়া।
- বারবার ঘটনার কথা বলা বা আঁকা।
- ঘুমে সমস্যা ও দুঃস্বপ্ন।
- অকারণে ভয় পাওয়া, মা-বাবাকে আঁকড়ে ধরা।
- খাওয়ায় অনীহা, চঞ্চলতা বা রাগ।
- দুর্ঘটনাস্থল বা সংশ্লিষ্ট কিছুর দেখা পেলেই আতঙ্কিত হওয়া।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাবা-মা শিশুর পাশে থেকে নিরাপত্তা বোধ জাগাতে পারলেই ট্রমা ধীরে ধীরে কাটানো সম্ভব।
শিশুর ট্রমা দূর করতে বাবা মা কীভাবে সাহায্য করবেন
- শিশুকে বারবার আশ্বস্ত করতে হবে যে সে এখন নিরাপদ।
- জোর করে ভুলিয়ে দিতে নয়, বরং তার কথা মন দিয়ে শুনতে হবে।
- ছোট ছোট স্পর্শ, কোলে নেওয়া, হাত ধরা বা আলিঙ্গন শিশুর ভরসা বাড়ায়।
- দুর্ঘটনার স্মৃতি নিয়ে কথা বলতে বা আঁকতে দিলে তা মানসিক চাপ কমায়।
- নিয়মিত খাওয়া, ঘুম ও খেলাধুলার মাধ্যমে শিশুকে আগের রুটিনে ফিরিয়ে আনা জরুরি।
- লক্ষণ দীর্ঘায়িত হলে বিশেষজ্ঞ কাউন্সেলরের সাহায্য নিতে হবে।
মনোবিজ্ঞানীরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, শিশুকে হুট করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো সম্ভব নয়। ভালোবাসা, সময় ও যত্নই শিশুর মানসিক ক্ষত নিরাময়ের সবচেয়ে কার্যকর উপায়।