এই দুঃসহ গরমে রোদের নাম শুনলেই নিশ্চয় গরম লাগতে আরম্ভ করেছে? কিংবা ভাবছেন, এখন রোদে বের হলেই মাথা ব্যথা শুরু হবে। আসলে রোদ পোহানো শব্দটা শুনলেই শীতের সকাল, মিষ্টি রোদ, রোদে পাটি পেতে মা-চাচিদের আড্ডা, রোদের দিকে পিঠ ফিরিয়ে পিঠা খাওয়া এসবের কথাই মনে পড়ে। যদিও শহুরে মানুষের জীবনে এসব শুধুই স্মৃতি। কিন্তু রোদ যে শরীরের জন্য উপকারী এ কথা তো অস্বীকার করার উপায় নেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়ম মেনে গায়ে রোদ লাগানোর অনেক উপকার রয়েছে। এটি আমাদের মানসিকভাবেও ভালো রাখে। দেহের মোট চাহিদার ৮০ শতাংশ ভিটামিন ডি আসে সূর্যালোক থেকে। রোদের সংস্পর্শে এলে ত্বকে থাকা কোলেস্টেরল দিয়ে তৈরি হয় এই ভিটামিন ডি। তাই ভিটামিন ডি-কে বলা হয় ‘সানশাইন ভিটামিন’।
ভিটামিন ডির কেন প্রয়োজন
* আমাদের হাড় ভালো রাখতে ভিটামিন ডি জরুরি। হাড় ও দাঁতের জন্য দরকার এই ভিটামিন।
* রোগ প্রতিরোধক্ষমতা, নার্ভ সিস্টেম ও মস্তিষ্কের জন্যও প্রয়োজন এই ভিটামিন।
* টাইপ ২ ডায়াবেটিস ও কয়েক ধরনের ক্যানসার সমস্যার সমাধানে কাজে দেয় ভিটামিন ডি।
* ত্বকের উজ্জ্বলতা, ত্বক পুনর্নিমাণ, ত্বকের প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানো, বয়সের ছাপ দূর করা, ব্রণ কমানো, ফাইন লাইন ও কালো দাগ কমানোর মতো কাজ করে এই ভিটামিন।
* শরীরে ছত্রাকজনিত কোনো ইনফেকশন থাকলে প্রতিদিন রোদে বসতে হবে।
* অনিদ্রার সমস্যা দূর প্রতিদিন নিয়ম মেনে রোদ পোহালে শরীরে মেলাটোনিন হরমোন বাড়ে। এটি ঘুম আনতে সহায়ক।
* সকালের রোদ মানব শরীরের রক্তচাপ কমাতে এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
* বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, সূর্যের আলোতে থাকলে আমাদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে। আর কোলেস্টেরল কমলে কমে ওজনও।
কতটুকু ভিটামিন ডি প্রয়োজন
প্রতিদিন ভিটামিন ডি নিতে হবে নির্দিষ্ট একটি পরিমাণে। ভিটামিন ডি মাপার দুটি পদ্ধতি রয়েছে। একটি মাইক্রোগ্রাম (এমসিজি) ও অন্যটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট (আইইউ)। মেডিসিন ইনস্টিটিউটের খাদ্য ও পুষ্টি বোর্ডের মতে, শিশু ও তরুণদের প্রতিদিন ৬০০ আইইউ বা ১৫ এমসিজি ভিটামিন ডি দরকার।
কখন পাবেন প্রয়োজনীয় ভিামিন ডি
বাড়তি ভিটামিন ডির জন্য বেশি রোদে থাকলে উপকারের বদলে ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দুপুরের ঠিক আগমুহূর্ত হলো রোদে যাওয়ার সঠিক সময়। কারণ এই সময়ে সূর্যের তাপ বেশি থাকে। এ সময় ভিটামিন ডি নেওয়ার জন্য শরীর সব থেকে বেশি উপযোগী থাকে। তাই এ সময়টাতে ১০ থেকে ৩০ মিনিট এ সময় রোদে থাকলেই প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। সূর্য পূর্ব-পশ্চিম আকাশে হেলে থাকলে তাতে যে অতিবেগুনি রশ্মি থাকে, তা পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি তৈরি করতে পারে না। ত্বকের রং যত গাঢ় হলে অর্থাৎ ত্বকে বেশি মেলানিন থাকলে সূর্যালোক থেকে অতিবেগুনি রশ্মি প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। কাজেই গায়ের রং যত কালো, তাকে তত বেশি সময় রোদে থাকতে হবে।
কীভাবে রোদ পোহাবেন
বিদেশে সমুদ্র তীরে সানবাথ খুব সাধারণ বিষয়। আমাদের দেশে সারা বছরই রোদ থাকে বলে আমরা আলাদা করে রোদ পোহানোর বিষয়টা নিয়ে ভাবি না। কিন্তু রোদ থেকে পুরো উপকার পাওয়ার জন্য যতটা সম্ভব ছোট হাতার পাতলা কাপড় পরতে হবে। যাতে রোদ সরাসরি গায়ে লাগে। মুখে রোদ লাগাতে না চাইলে সূর্যের দিকে পিঠ করে বসুন। ত্বক খুব বেশি স্পর্শকাতর না হলে সানস্ক্রিন ছাড়া কিছু সময় রোদে বসলে ত্বক বেশি ভিটামিন ডি পাবে। এ ছাড়া চাইলে সানগ্লাস ও হ্যাট পরেও রোদে বসা যায়।
রোদের অপকারিতা
ত্বক রোদে পুড়লে কালচে ভাব আসতে পারে। এছাড়া ত্বক কিছু জায়গায় লালচে হয়ে যাওয়া, ব্যথা হওয়া, চুলকানি, ফুলে যেতে পারে। রোদে বেশি সময় থাকলে ত্বকে ভাঁজ পড়া, চামড়া আলগা হওয়া ও ফেটে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেক বেশি সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি ত্বকের ক্যানসারের জন্য দায়ী। লম্বা সময় রোদে থাকলে অতি বেগুনি রশ্মি চোখের রেটিনায় ক্ষতি করতে পারে। এতে চোখে ছানির সমস্যা হতে পারে।
তাই রোদ থেকে সম্পূর্ণ উপকার নিতে চাইলে রোদ পোহানোর নির্দিষ্ট সময়, পরিমাণ এবং রোদ পোহানোর উত্তম সময় সম্পর্কে জানতে হবে।