স্মার্টফোন এখন মানুষের নিত্যসঙ্গী। বর্তমানে স্মার্টফোন যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এটি শুধু কথা বলার জন্যই নয়, বরং বার্তা পাঠানো, ইন্টারনেট ব্রাউজ করা, ছবি ও ভিডিও দেখা, গান শোনা, গেম খেলা এবং আরও অনেক কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। স্মার্টফোন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মানেই এখন রিলসের ছড়াছড়ি।
ফেসবুক, ইউটিউব থেকে শুরু করে টিকটক, ইনস্টাগ্রাম-প্রতিটি মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন নামে আধিপত্য বিস্তার করে আছে ছোট ছোট ভিডিও। বিশেষ করে স্বল্প দৈর্ঘ্যের ভিডিও বা রিলস দেখার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। অনেকেই রাতে দেরি করে ঘুমানোর বদলে রিলস দেখে সময় কাটান। রিলস কেবল তরুণদের নয়, সব বয়সীর কাছেই জনপ্রিয়। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাত জেগে অতিরিক্ত রিলস দেখা উচ্চ রক্তচাপের (হাইপারটেনশন) ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
গবেষণার ফলাফল
৪,৩১৮ জন অংশগ্রহণকারীকে নিয়ে পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, যারা নিয়মিত ঘুমানোর আগে স্ক্রিনে রিলস বা শর্ট ভিডিও দেখেন, তাদের রক্তচাপ বৃদ্ধির প্রবণতা অন্যদের তুলনায় বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাতের বেলা স্ক্রিন থেকে নির্গত নীল আলো (Blue Light) মেলাটোনিন হরমোনের উৎপাদন কমিয়ে দেয়। এই হরমোন ঘুম নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মেলাটোনিন কমে গেলে ঘুমের ঘাটতি হয়, যা সরাসরি উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে।
3156
কেন রিলস বেশি ক্ষতিকর
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ছোট ভিডিও দেখার অভ্যাসে আসক্তি তৈরি হয়। কারণ রিলস একটির পর আরেকটি দেখার প্রবণতা জাগায়, যা ঘুমানোর সময় পেছায়। এছাড়া-
* আবেগপ্রবণ কনটেন্ট মানসিক চাপ বাড়ায়
* ঘুমের অভাবে শরীরচর্চা কমে যায়
* রাত জাগার সময় অনেকেই অস্বাস্থ্যকর খাবার বা ক্যাফেইন গ্রহণ করেন
* এসব অভ্যাসই দীর্ঘমেয়াদে উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে
কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়
চিকিৎসকরা বলছেন, উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি এড়াতে ঘুমের আগে স্ক্রিন ব্যবহার কমাতে হবে। তারা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন-
* ঘুমানোর অন্তত ৩০ মিনিট আগে মোবাইল বন্ধ রাখা
* ফোনে ‘ব্লু লাইট ফিল্টার’ বা ‘নাইট মোড’ চালু করা
* ঘুমানোর আগে মেডিটেশন বা গভীর শ্বাস নেওয়া
* বই পড়া বা হালকা গান শোনার অভ্যাস গড়ে তোলা
* প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা ব্যায়াম করা
বিশেষজ্ঞের মত
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, রাত জেগে রিলস দেখা সাময়িক বিনোদন দিলেও এটি দীর্ঘমেয়াদে রক্তচাপ বাড়িয়ে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
তাই বিনোদনের জন্য হলেও রাত জাগা থেকে বিরত থাকা এবং নিয়মিত ঘুমের অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। ভালো ঘুম মানেই সুস্থ শরীর, আর সুস্থ শরীরই সুখী জীবনের মূল ভিত্তি।