ছোট ছোট ভুলই স্পাইন বা মেরুদণ্ডের স্বাস্থ্য নীরবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। প্রতিদিনের এই ভুলগুলো অজান্তেই আমাদের শরীরের ভারসাম্য নষ্ট করছে। ভারতের বিখ্যাত নিউরোসার্জন ডা. গৌরব বাত্রা এমন ছয়টি অভ্যাসের বিষয়ে সাবধান করেছেন।
হিন্দুস্তান টাইমস সূত্রে, ডা. গৌরব বলেন, ‘পিঠের ব্যথা একদিনে আসে না। এটা ধীরে ধীরে শুরু হয় এবং একসময় অসহ্য হয়ে ওঠে। কিন্তু অল্প কিছু সচেতনতা ও দৈনন্দিন অভ্যাসের পরিবর্তন আমাদের মেরুদণ্ড দীর্ঘদিন সুস্থ রাখা সম্ভব।’
ক্ষতিকর অভ্যাসগুলো: ডা. গৌরব যেসব ক্ষতিকর অভ্যাস এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
১) ঘণ্টার পর ঘণ্টা একভাবে বসে থাকা
অফিসে টানা বসে কাজ করলে মেরুদণ্ডের নিচের অংশে প্রচণ্ড চাপ পড়ে। বাঁকা হয়ে বসা বা ঘাড় নিচু করে মনিটরের দিকে তাকিয়ে থাকা ডিস্ক ও পেশিতে টান ধরায়, যা দীর্ঘমেয়াদে ডিস্ক প্রোল্যাপস বা কোমর ব্যথার কারণ হতে পারে।
তাই প্রতি ঘণ্টায় একবার উঠে হাঁটুন, স্ক্রিন চোখের সমতলে রাখুন, এবং কোমরের নিচে সাপোর্ট দিন।
২) অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার
দীর্ঘ সময় ঘাড় নিচু করে ফোনে তাকিয়ে থাকা আপনার ঘাড়ের পেশিতে ৫–৬ গুণ বেশি চাপ ফেলে। এর ফলে জন্ম নিচ্ছে নতুন এক সমস্যা ‘টেক নেক’। তাই ফোন চোখের সমতলে ধরুন, দুই হাতে ব্যবহার করুন, মাঝে মাঝে ঘাড় হালকা নাড়াচাড়া করুন।
৩) অলস জীবনযাপন
দিনভর বসে থাকা, ব্যায়াম না করা বা পর্যাপ্ত হাঁটাচলা না করলে স্পাইনের সহায়ক পেশিগুলো দুর্বল হয়ে যায়। এর ফলে পিঠের ব্যথা স্থায়ী হয়ে পড়ে। সে কারণে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটুন, হালকা স্ট্রেচিং ও কোর এক্সারসাইজ করুন।
৪) ভুলভাবে ভারী জিনিস তোলা
কোমর না ভাঁজ করে সোজা পিঠে ভারী কিছু তুললে ডিস্কে মারাত্মক চাপ পড়ে এবং আকস্মিক স্প্যাজম হতে পারে। সে কারণেই ভার তোলার সময় হাঁটু ও কোমর ভাঁজ করুন, বস্তুটি শরীরের কাছাকাছি রাখুন এবং ঘুরে ভার তুলবেন না।
৫) নরম বিছানায় ঘুমানো
অতিরিক্ত নরম বিছানা মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক বাঁক নষ্ট করে দেয়। এর ফলে ঘুমের সময়ও পেশিতে টান ধরে। তাই মাঝারি শক্ত ম্যাট্রেস ব্যবহার করুন যা মেরুদণ্ডকে ধরে রাখতে পারে বাঁকিয়ে যেতে দেয় না।
৬) পেটের ওপর ভর দিয়ে ঘুমানো
এই ভঙ্গিতে ঘুমালে ঘাড় ও নিচের পিঠে অস্বাভাবিক চাপ পড়ে। দীর্ঘদিন এভাবে ঘুমালে ঘাড়ব্যথা ও মেরুদণ্ডের বক্রতা দেখা দিতে পারে। সে কারণে পাশে কাত হয়ে ঘুমান, হাঁটুর মাঝে একটি বালিশ রাখুন যাতে স্পাইনের প্রাকৃতিক রেখা বজায় থাকে।
ডা. গৌরব বাত্রার মতে, আমাদের মেরুদণ্ড শরীরের অন্যতম অঙ্গ, এটার একটু ক্ষতি হলেও পুরো দেহের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা, নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং ঘুম ও বসার অভ্যাসে সচেতন পরিবর্তন আনুন। এতে করে মেরুদণ্ড সুস্থ থাকবে।