ভূমিকম্পের পর ৭২ ঘণ্টা টিকে থাকার জরুরি কিট

ভূমিকম্প বা অন্যান্য বড় ধরনের দুর্যোগের পর জরুরি পরিষেবা পৌঁছাতে সময় লাগতে পারে। এই অত্যন্ত সংকটজনক সময়ে অন্তত ৭২ ঘণ্টা থেকে শুরু করে প্রয়োজন অনুসারে ২ সপ্তাহ পর্যন্ত নিজেদেরকে স্বনির্ভর রাখতে জরুরি সরঞ্জাম বা 'দুর্যোগ মোকাবিলা কিট' (Disaster Preparedness Kit) প্রস্তুত রাখা অত্যন্ত জরুরি। 

ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি (ফেমা) ঘর, কর্মস্থল এবং গাড়িতে এই কিট রাখার জন্য জোর পরামর্শ দিয়েছে।

ফেমা জানিয়েছে, দুর্যোগের আঘাতের পর প্রথম ৭২ ঘণ্টা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়, যখন জরুরি পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই পরিস্থিতিতে প্রত্যেক ব্যক্তিরই নিজস্ব উদ্যোগ ও প্রস্তুতির মাধ্যমে টিকে থাকার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ কিট তৈরি করা আবশ্যক।

কী কী থাকবে জরুরি কিটে? একটি পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন:

ফেমা-এর নির্দেশিকা অনুসারে, আপনার দুর্যোগ মোকাবিলা কিটে নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রীগুলো অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে:

১. খাদ্য ও পানীয়ের ব্যবস্থা:

* পানি: প্রতিজনের জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে আধা গ্যালন (প্রায় ২ লিটার) পানীয় জল মজুত রাখতে হবে। শিশু, স্তন্যদানকারী মা এবং অসুস্থদের জন্য বাড়তি পানির প্রয়োজন।

* বিশুদ্ধকরণ: পানি ফুটিয়ে বা ব্লিচ/পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ব্যবহার করে বিশুদ্ধ করে নেওয়া সবচেয়ে নিরাপদ।

* খাবার: সহজে নষ্ট হয় না এবং রেফ্রিজারেশন বা রান্নার প্রয়োজন নেই—এমন খাবার অন্তত ৭২ ঘণ্টা থেকে ২ সপ্তাহের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে। শিশু ও বিশেষ খাদ্যপ্রয়োজনীয় ব্যক্তিদের জন্য অতিরিক্ত খাবার রাখুন।

২. যোগাযোগ ও আলোর উৎস:

* আলো: প্রতিটি বিছানার পাশে, কর্মস্থলে ও গাড়িতে টর্চলাইট এবং পর্যাপ্ত অতিরিক্ত ব্যাটারি রাখুন।
* যোগাযোগ: ব্যাটারিচালিত বা হ্যান্ড-ক্র্যাঙ্ক রেডিও দুর্যোগ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে কাজে আসতে পারে।

* সংকেত: ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়লে অন্যদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে একটি বাঁশি (হুইসেল) খুবই কার্যকর।

* জরুরি যোগাযোগ: প্রথম ২৪ ঘণ্টায় ভয়েস কলের বদলে টেক্সট, ইমেইল বা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করা উত্তম। দূরবর্তী কোনো আত্মীয়কে জরুরি যোগাযোগের জন্য মনোনীত করে রাখুন।

৩. প্রাথমিক চিকিৎসা ও অন্যান্য সরঞ্জাম:

* চিকিৎসা সামগ্রী: বাড়ি ও গাড়িতে একটি পূর্ণাঙ্গ ফার্স্ট এইড কিট এবং প্রয়োজনীয় প্রেসক্রিপশনের ওষুধপত্র, অতিরিক্ত চশমা বা কন্টাক্ট লেন্স সলিউশন রাখা বাধ্যতামূলক।

* নিরাপত্তা: একটি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র কিটে থাকলে সবচেয়ে ভালো। গ্যাস ও পানির ভালভ বন্ধ করার জন্য একটি অ্যাডজাস্টেবল রেঞ্চ কিটে রাখা জরুরি।

* নগদ অর্থ: এটিএম বা ব্যাংক ব্যবস্থা অচল হয়ে যেতে পারে; তাই কিছু নগদ অর্থ কিটে রাখুন।

* গুরুত্বপূর্ণ নথি: বীমা পলিসি, পরিচয়পত্র এবং আর্থিক নথিপত্রের কপিগুলো একটি নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ করুন।

* অন্যান্য: স্যানিটেশন আইটেম, শিশুদের সামগ্রী এবং ঠাণ্ডা আবহাওয়ার জন্য গরম পোশাক, কম্বল বা স্লিপিং ব্যাগ অবশ্যই রাখতে হবে। ধ্বংসাবশেষ বা কাঁচের ওপর দিয়ে হাঁটার জন্য শক্ত বা মোটা সোলের জুতো কিটের সঙ্গে রাখুন।

এই কিট প্রস্তুতির মাধ্যমে দুর্যোগের চরম মুহূর্তে নিজেদের ও প্রিয়জনদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব বলে ফেমা জানিয়েছে।