বাংলা চিত্রশিল্পের উজ্জ্বল নক্ষত্র বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ৩১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। এ উপলক্ষে নড়াইল জেলা প্রশাসন, এস এম সুলতান ফাউন্ডেশন এবং স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে।
সকালে সুলতান কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত হয় কোরআন খতম, শিশুস্বর্গে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, শিল্পীর সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি ও দোয়া মাহফিল। এরপর আয়োজিত হয় চিত্র প্রদর্শনী, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা।
নড়াইলের জেলা প্রশাসক ও সুলতান ফাউন্ডেশনের সভাপতি শারমিন আক্তার জাহান জানান, ‘এই মহামানবকে যথাযোগ্য সম্মান জানাতে আমরা দিনব্যাপী আয়োজন করেছি। সুলতানের স্বপ্ন, সাধনা ও দর্শনকে নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে এ আয়োজন অব্যাহত থাকবে।’
১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইল শহরের মাছিমদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এস এম সুলতান। শৈশবেই চিত্রাঙ্কনের প্রতি প্রবল আগ্রহ দেখান। মাত্র অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন তিনি কলকাতার জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ রায়ের নজরে আসেন, যিনি তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেন খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ ও শিল্পসমালোচক সায়েদ সোহরাওয়ার্দির সঙ্গে।
বিশেষ বিবেচনায় ১৯৪১ সালে তাঁকে ভর্তি করা হয় কলকাতা আর্ট কলেজে। ১৯৪৪ সালে তিনি প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। তবে প্রথাগত শিক্ষা তার জন্য যথার্থ ছিল না। তাই তিনি চলে যান কাশ্মীরের পাহাড়ি অঞ্চলে, উপজাতিদের জীবনচিত্র আঁকতে।
পরে তিনি সফর করেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। তার শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়েছে নিউইয়র্ক, লন্ডন, মিশিগান, লাহোর, করাচি, ঢাকাসহ বহু স্থানে।
১৯৫৫-৫৬ সালের দিকে দেশে ফিরে নড়াইলের নিজ গ্রামে গড়ে তোলেন ফাইন আর্ট স্কুল ও শিশুদের জন্য বিশেষ প্রতিষ্ঠান ‘শিশুস্বর্গ’। ১৯৯২ সালে তৈরি করেন ভ্রাম্যমাণ শিশুস্বর্গ ৬০ ফুট দীর্ঘ একটি নৌকা, যেখানে শিশুদের চিত্রাঙ্কন শেখানো হতো চিত্রা নদীতে ভেসে বেড়ানোর সময়।
সুলতানের চিত্রকলায় ফুটে উঠেছে বাংলার কৃষক, জেলে, মাঠ-প্রান্তর, নদী, হাওর, কুমার, কামার ও প্রকৃতির বাস্তবচিত্র। তার ছবি কখনোই বিলাসী শহুরে জীবনের প্রতিচ্ছবি নয়, বরং গ্রামীণ সংগ্রামী মানুষের গর্বিত উপস্থাপন।
এস এম সুলতান ছিলেন এক অসাধারণ চরিত্র। বাঁশি বাজাতে পারতেন, পুষতেন সাপ, ভল্লুক, ময়না, বানরসহ নানা প্রাণী। নিজ বাড়িতে তৈরি করেছিলেন ছোট্ট চিড়িয়াখানা। হিংস্র প্রাণীকেও বশ করতে পারতেন তিনি।
জীবনকালে পেয়েছেন বহু স্বীকৃতি
- ১৯৮২ সালে একুশে পদক
- ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক
- ১৯৮৪ সালে রেসিডেন্ট আর্টিস্ট
- ১৯৮৬ সালে চারুশিল্পী সম্মাননা
দীর্ঘদিন শ্বাসকষ্টে ভোগার পর ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই চিরকুমার ও অসাম্প্রদায়িক শিল্পী। পরে তাকে সমাহিত করা হয় নড়াইলের নিজ বাড়ির আঙিনায়।
বর্তমানে সেখানে স্থাপিত হয়েছে এস এম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা, যেখানে সংরক্ষিত রয়েছে তাঁর রঙ, তুলি, চিত্রকর্ম ও স্মৃতি।