দৈনিক খবর সংযোগের শনিবাসরীয় সাময়িকী সাহিত্য সংযোগে গত ৫ জুলাই প্রকাশিত নাহিদা আশরাফীর গল্প ‘মিসিং মঙ্গলবার’ গভীর মনোযোগের সঙ্গে পাঠ করেছি। গল্পটি একটি মনস্তাত্ত্বিক, সমাজ-রাজনৈতিক ও মানবিক টানাপড়েনের চমৎকার মিশ্রণে নির্মিত। শহরতলি থেকে আসা এক আধা-চেতনা-বিপন্ন যুবক মানিক যখন এক চায়ের দোকানে জীবনের ক্ষুদ্র আশ্রয় খুঁজে পায়, তখন তা ধীরে ধীরে তার নিয়তিকে গ্রাস করে। তার সরলতা, প্রেম, জিজ্ঞাসা ও শেষদিকে প্রতিবাদ যেন এক ধাপে নায়কোচিত আত্মপ্রকাশ। গল্পে ব্যবহৃত উপভাষা, গ্রামীণ সংলাপ ও ধ্বনিচিত্র যেমন ‘ছ্যাড়াডা’, ‘চাচামিয়া’, ‘তেলচিটে বালিশ’, ‘চাঁদর রঙ জ্বলে যাওয়া’ শব্দগুচ্ছ কাহিনিকে বাস্তবঘন করে তোলে। একইসঙ্গে পাঠককে যেন চায়ের দোকানের বেঞ্চিতে বসিয়ে দেয়। দৃশ্যচিত্র ও শব্দের চিত্রায়ণ এতটাই জোরালো যে গল্পটি অনায়াসে নাট্যরূপে রূপান্তরযোগ্য।
প্রধান চরিত্র মানিক—এক আশ্রয়হীন যুবক—যে অর্থনৈতিক চাপ ও পারিবারিক পলায়নের টানে এক পরিত্যক্ত টিনের ঘরে বসতি গড়ে তোলে। দিনে সে একজন শ্রমজীবী, আর রাতে ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়ে এক নীরব, অনুচ্চারিত যৌনচক্রে। নারীর প্রতি তার আকর্ষণ প্রথমে রতিকেন্দ্রিক থাকলেও পরে তা রূপ নেয় একধরনের প্রেম ও অধিকারবোধে। কিন্তু সমাজের তলে চলা যে অন্ধকার, তা দিনের আলোয় আসতে পারে না—এমনকি প্রেমের মুখোমুখিও নয়।
চরিত্রচিত্রণ ও পরিবেশের নির্মাণ জীবন্ত ও নিঁখুত—পাঠক যেন এক পর্যায়ে গল্পের ভেতর বাস করতে থাকে। মঙ্গলবার—যে দিনে ‘হাট বসে’, ‘ফয়সালা হয়’, আর ‘গণধিকৃত অন্যায়’ ঘটে—সে দিনের প্রতীকায়ন অসাধারণ। গল্পটির সবচেয়ে বড় শক্তি তার ব্যঞ্জনাময়তা, চুপচাপ সমাজব্যবস্থার ভেতরের পচনশীল রাজনীতি ও লালসাকে এমনভাবে তুলে ধরা হয়েছে, যা ক্ল্যাসিক ও সমকালীন।