সলাজ হাসি ॥ নুসরাত সুলতানা

লামিয়া বরের দিকে তাকিয়ে ভড়কে যায়। আর মনেপ্রাণে স্রষ্টাকে ডাকে আল্লাহ যাকে ভাবছি সে যেন না হয়। বর অফ হোয়াইট পাজামা -পাঞ্জাবি আর টোপর পরে আছে। ঠিকভাবে বরকে দেখতে পাচ্ছে না সে। ইতোমধ্যে লামিয়ার কাজিন জাহেদ এসে বলে- দেখছো জামাই? লম্বাচূড়া ছিমছাম বডি। খুব ভদ্র ছেলে। হাসিডা খুব মিষ্টি। যেকোনো মানুষই ছেলেডার অমায়িক কথা আর হাসিতে ওর অনুরাগী হইয়া যাইবে। লামিয়া বলে - আমাদের রূপাও তো মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর। আবার আর্কিটেক্ট। মেয়ে আমাদের পাঁচ ফিট তিন ইঞ্চি লম্বা। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ হইলেও চেহারা কত মিষ্টি। জাহেদ মিষ্টি হেসে বলে হ মাশাল্লাহ রাজযোটক। আর জামাই ধর বাপ- মার একমাত্র ছেলে। মিরপুর ডিওএইচ এস এ নিজেদের ফ্ল্যাট। একটা আমেরিকান বায়িং হাউজে মার্কেটিং ডিরেক্টর পদে আছে। বেতন মাসে দুই লাখ। সবকিছু মিল্লা রূপা জীবনে সুখীই অবে আশা করা যায়।

দুই.
আনিসকে লামিয়া বারবার দ্রুত ফিরতে বলেছিল বিকেলের গেইম থেকে। কিন্তু আনিসের একটু দেরি হয়ে যায়। আগামীকাল আনিসের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগে একটা আন্তর্জাতিক সেমিনার আছে। আনিস তার চিফ কো -অর্ডিনেশন অফিসার। 
আনিস ফেরার সঙ্গে সঙ্গে লামিয়া তার চুরাশি কাউন্টের কালো আর সোনালি জরি সুতার কাজের 

জামদানি শাড়িটি পরে কাজিন সাইমের মেয়ের বিয়েতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। আনিস এবং আবরার (লামিয়ার ছেলে) দুজনেই পরেছে ঘিয়া রঙের পাঞ্জাবি আর কালো প্যান্ট। লামিয়ার বয়স পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই। উনপঞ্চাশ পেরিয়েছে কিন্তু সবাই ভাবে লামিয়া বড়জোর চল্লিশ। বড় চোখ, হলুদাভ গায়ের রঙ আর 
কমলার কোয়ার মতো ঠোঁট, সঙ্গে ভারী সমুন্নত বক্ষযুগল লামিয়াকে বেশ আকর্ষণীয় করে তুলেছে। একটু ভারী স্বাস্থ্যের অধিকারী হলেও সেটা তার আবেদন কমায়নি বরং বাড়িয়েছে। লামিয়ার কাজিন সাইমের বাসা ধানমন্ডি ২৭। সেদিন সাইমের মেয়ে রূপারই আকদ সম্পন্ন হচ্ছে। বাসায় পৌঁছাবার সঙ্গে সঙ্গেই সাইম বরের বাবা-মায়ের সঙ্গে লামিয়া আর তার লে. কর্নেল বরকে পরিচয় করিয়ে দেয়। আর ছেলে আবরারকেও পরিচয় করিয়ে দেয়। বরের বাবা সোনালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার। মা ছোট খাটো বিজনেস করেন। বরের বাবা ফরিদ আহমেদের দাড়ি আছে, বেশ হ্যান্ডসাম ভদ্রলোক, মা জুলিয়া আহমেদ বেশ ফর্সা, সুন্দরী তিনি কালো আবায়া বোরকা পরে এসেছেন। বরের বাবা-মা নিজেদের ছেলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে আছেন। খুব ভদ্র, তেমন কোনো বান্ধবী নেই, নামাজ পড়ে পাঁচ ওয়াক্ত, কখনো কাযা হলে পরে আদায় করে নেয়, পাঞ্জেগানা সুরা তেলাওয়াত করে প্রতিদিন ইত্যাদি, ইত্যাদি। লামিয়া ভাবে যাক রূপা অনেক সুখে থাকবে। এরা ভদ্রলোক এবং উদার ধার্মিক। সংস্কৃতি এবং ধর্ম দুটিই আছে জীবন চর্চায়।

তিন.
লামিয়ার স্বামী আর্মি অফিসার। বিইউপিতে কর্মরত। 
লামিয়া আছে মিলিটারি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজিতে (মুয়েট) সিভিল ফ্যাকাল্টি হিসেবে। মুয়েটের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সে। লেখালেখিও করে, এ যাবৎ বেরিয়েছে ৯টি গ্রন্থ গল্প-কবিতা মিলে। ঢাকায় অন্তত ১৫ জন কাজিন থাকে লামিয়াদের। 

মোটামুটি সাত-আটজন কাজিন এসেছে সেদিন রূপার বিয়েতে। সব ভাইবোন একত্রিত হওয়ায় সেই ছোট বেলার আনন্দ আবহে ফিরে গেছে তারা। কে বউ ছি খেলার সময় জোরে থাপ্পড় দিত, কেউ কানামাছি খেলার সময় পড়ে যেত এসব নিয়ে খুব হাসি তামাশা হচ্ছে ঘরের ভেতরে। এরভেতর সাইমের বড় ভাই জামান আহমেদ এসে বলে- এই বিয়া তো পড়াইয়া হালাইলো কাজি সাইবে। তোরা জামাইরে মিষ্টি মুখ করাবি না? লামিয়া জিজ্ঞেস করে দেনমোহর কত দাদা? জামান বলে দেনমোহর ২০ লাখ কইলে হেও অরা রাজি অইতে। আমরাই কইছি ১০ লাখ।

চার.
প্রথমে মেয়ের মামীরা জামাইকে মিষ্টি মুখ করাচ্ছে। তারপর চাচী, ফুপু এবং খালারা। সবাই যখন মিষ্টি খাওয়াচ্ছে তখন লামিয়ার একটা গুরুত্বপূর্ণ ফোনকল আসে। লামিয়া উঠে গিয়ে ফোনকল এটেন্ড করে।

মিষ্টি খাওয়ানো শেষে জামাই সুমন হায়দার একে একে সবাইকে সালাম করে আর সবাই জামাইকে নগদ টাকা সালামি উপহার দেয়। কথা বলা শেষ করে যখন আসে তখন জাহেদ লামিয়ার হাতে একটা মিষ্টির থালা ধরিয়ে দেয়। বলে তুই এই ফাঁকে জামাইরে মিষ্টিও খাওয়াইয়া দে। জামাই যখন এসে লামিয়ার সামনে এসে দাঁড়ায়। লামিয়ার সমস্ত শরীর ঘেমে উঠতে থাকে। মুহূর্তে সে চলে যায় প্রায় পাঁচ বছর আগের এক ঘটনায়।

পাঁচ. 
সেদিন লামিয়ার প্রকাশনা সংস্থা স্বরলিপি প্রকাশনীর লেখক সম্মেলন থেকে ফিরছিল। যতদূর মনে পড়ে অনুষ্ঠান ছিল শাহাবাগ জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল হলে। সি এন জি খুঁজে না পেয়ে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা বাসে উঠেছিল। বাসটি মিরপুর এক হয়ে মিরপুর বারোয় নামিয়ে দেওয়ার কথা। তখন বাস পূরবী পার হয়ে গেছে। লামিয়া সামনেই বসেছিল।

এরভেতর একটা শ্যামবর্ণ লম্বা, উজ্জ্বল চেহারার ছেলে এসে পাশে বসেছিল। ছেলেটি এসেই ভদ্রভাবে নিজের নাম বলে লামিয়ার সঙ্গে পরিচিত হয়। বিভিন্ন কথা বলতে থাকে। লামিয়ার ছেলেটিকে উচ্চশিক্ষিত ও ভদ্র মনে হয়। কথায় কথায় জানা যায় ছেলেটি টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটির গ্র্যাজুয়েট এবং লামিয়ার প্রতিবেশী। লামিয়াও নিজের পরিচয় দেয় এবং লেখালেখির কথাও বলে। তখন তারা ফোন নাম্বার ও বিনিময় করে। কিছুক্ষণ পর থেকেই ছেলেটি লামিয়ার রূপ-গুণের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ওঠে। এরপরই ছেলেটি পায়ের সঙ্গে পা লাগাচ্ছিল। পা সরিয়ে নিলে কাঁধের সঙ্গে কাঁধ লাগাতে চেষ্টা করছিল। ছেলেটা জিজ্ঞেস করে আপনি নামবেন? লামিয়া বলে এই তো মিরপুর বারোয় নামব। ছেলেটি হাসি দিয়ে বলে আমিও। লামিয়া বলে আমি শাপলা বিল্ডিং থাকি। ছলেটা বলে আমি এই তো তোমার পেছনে দুই নাম্বার অ্যাভিনিউ থাকি। ছেলেটা হাত বাড়িয়ে লামিয়ার হাত ধরে। বলে তোমার হাতগুলো বাচ্চাদের মতো নরম। তুমি কী সবসময় টিপ পরো? লামিয়া বলে হ্যাঁ, আমার পছন্দ। সুমন বলে সুন্দর লাগে,বাচ্চা বাচ্চা লাগে।

সেদিন লামিয়া একটা লাল-সাদা চেক লং শার্ট, কালো প্যান্ট, লাল হিজাব, গোলাপি লিপস্টিক আর লাল টিপ পরেছিল। বাস থেকে নেমে সুমন বলে-চল তোমাকে পৌঁছে দিই। রিকশায় উঠেই সুমন লামিয়ার কোমর জড়িয়ে ধরে। লামিয়া বলে, এই ছেলে কী বাজে আচরণ করছ? হাত সরাও। সুমন বলে আমি এতকাছে একজন মুক্তমনা বন্ধু পেলাম। বন্ধুকে কাছে টেনে নিচ্ছি। কাল তোমার সিডিউল কী? আমার শুক্র-শনি দুইদিন বন্ধ। লামিয়া বলে আমার হাসবেন্ড বাসায় থাকবে। আমি বেরুতে পারব না। এরভেতর সুমন রিকশায় হুড তুলে লামিয়ার স্তনে হাত দেয়। লামিয়া বলে- আমি চিৎকার করব। সুমন হাসে আর বলে তুমি এখানকার ফ্যাকাল্টি। তোমার মান-সম্মান কিছু থাকবে না। তোমার টিপ আমাকে পাগল করে দিয়েছে। সুমন জোর করে লামিয়ার শার্টের বোতাম খুলে স্তনে মুখ দেয়।

লামিয়া সুমনের সঙ্গে শক্তিতে পেরে ওঠে না। গালের সঙ্গে গাল লাগিয়ে বলে, আব্বা আম্মা বাসায় না থাকলে বাসায় নিয়া যাইতাম তোমারে। লামিয়া বলে আমি কেন যাব? তুমি খুব বাড়াবাড়ি এবং অসভ্যতা করেছ। এর ভেতর রিকশা চলে আসলে সুমন লিফটে ওঠে লামিয়ার সঙ্গে আর লামিয়ার স্তন এবং হিপ খামচে ধরে। লিফট এসে গেলে জোর করে লামিয়ার হাত নিয়ে সুমনের শিশ্নতে দিয়ে নিজে নিজে হাত ওঠানামা করায় বলে আদর করে দিয়ে যাও, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। লামিয়া জোর করে হাত ছাড়িয়ে চলে আসতে চায় আর বলে, অফিসার কেউ চলে আসবে। তুমি বাঁচতে চাইলে চলে যাও। সুমন এরমধ্যেই বলে এই তো এসে গেছে। সুমনের বীর্যপাত হয়। তারপর সুমন চলে যায়। ভদ্র ভেবে আগেই লামিয়া নিজের করপোরেট মোবাইল নাম্বার দিয়েছিল। ভেবেছিল স্কাউন্ডেল ফোন দিলে র‍্যাব বা বান্ধবীর পুলিশ অফিসার স্বামীকে নাম্বারটা দেবে। আর ফোন করেনি। এসব ভাবতে ভাবতেই লামিয়া ভালো করে তাকিয়ে দেখে হ্যাঁ সেই শুয়োরের বাচ্চাটা। পুরো শরীর ঘামছে লামিয়া। আর অন্যরা আ! অ কী! তুই দেহি খালি জামাই দেহো। মিষ্টি মুখ করাবি না? সালামি দিবি না! চোখ ঠিকরে আগুন বেরুচ্ছে লামিয়ার। সুমন একটা সলাজ হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে লামিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।