ফুলবিজু ॥ জিললুর রহমান
চিরতা ফুলের সাথে তোমার অরূপ ভেসে গেছে
ফুল বিজু উৎসবের ভোরে,
বুকের গভীর কোণে যে দহন অনন্ত সকাল ধরে
জ্বলে ধিকি ধিকি; তুমি কি বুঝেছ তার আধুলি বা সিকি?
চিরতার সাথে যায় কলার বরক আর তীব্র কলহগুঞ্জন
তোমার আমার নিত্য সমাচার…
সাদা আর কটকটে লালে আজ উৎসবে জমে গেছে তঞ্চইঙ্গ্যা যুবতীর রং
গালে টোল পড়া ঠোঁটে ঢং পৃথিবীর সমস্ত প্রেমের গায়ে ছিটিয়ে দিয়েছে মোহ,
নদীর শীতল বুকে চলো আজ ঢেলে দিই বিগত সনের সব ক্ষোভ
কলাপাতা সাথে করে নিয়ে গেছে ইশকুলের যত খুনশুঁটি…
গত শতকের যত অবহেলা ঝিরির স্রোতের সাথে ছুটে যায় সমতলে।
পাহাড়ের ঘামফোঁটা একে একে জমে প্রপাতের ধারা হয়ে ঝরে।
তোমার নাকের ফুল আমার
কাস্তের সাথে ভেসে গেল জমির ফসল,
হালের বলদ আর যত গাই ও বাছুর ছুটতে ছুটতে পৃথুলা
মেঘের সাথে উড়তে থাকে সংক্রান্তির রাতে…
মৃত্যুর আগে ॥ কবীর আলমগীর
দুয়ারে দাঁড়িয়ে যমদূত—
কালো আঁধারের ডানায় বাজে বিউগলের আর্তনাদ
হিমশীতল রাতে শবযাত্রার নীরবতা
বাতাসে ঝুলে আছে মৃত্যুর রশি।
কোথাও আর নেই জ্যোৎস্নার ঢেউ,
শুধু কুকুরগুলোর কান্না
শূন্যতার গায়ে খোদাই করে রাখা আতঙ্কের অক্ষর।
হিম হিম কাঁপুনি শরীরে
আরও কিছু কথা আঁকড়ে ধরে অন্ধকার।
এই রাতেই বুকে লেখা পাণ্ডুলিপির শেষ পাতা
কালেমার বদলে ফুটে ওঠে তোমার নাম।
মৃত্যুর গলিঘুঁজির ভেতরেও
তোমার হাতের আঙুল খোঁজে উড়ে যাওয়া আত্মা।
যমদূতের চোখে ছিল কী বিস্ময়!
মৃত্যুর মুখেও জেগে থাকে
কালেমার বদলে কেবল তোমার নাম।
নাগরিক কাশবাস ॥ আজিজ কাজল
সিনথেটিক নরম ঘাসে লুকিয়ে আছে মানুষপোকা। পরিবেশবাদী পোকাগুলো
ফুটন্ত কড়াইয়ে অঙ্গার হচ্ছে; তাদের রেশমি সুতার বাকল পিষে তৈরি হচ্ছে
অনাহূত ঝড়ের ইতিহাস—এখানে নম্র-শরতের কোনো এন্ট্রি নেই।
আছে বড় সড় কোনো ফটোফ্রেমের ভ্রম; শুকনা দলা।
কংক্রিট মাচাঙের ভুল ডালে লতিয়ে ওঠি, হয়ে যাই অধীর নাগরিক-ছাওয়াল—
শত্রু-ঘন অন্ধকার ছেড়ে দাঁড়াই উঠানে।
শরৎফুলের মৌ-ঘাট ফেলে, গো-ধুলার গরুগুলা বাড়ির কাছে আসছে—
এদিকে আবারও ভুল পাঠে লিখে ফেলি শরতের নতুন কবিতা।
ইরেজার ॥ আরিফা ইয়াসমিন
কী এক অদ্ভুত ইরেজার হয়েছ!
স্মৃতিতে বিম্বিত প্রতিক্ষণ ছিল যে,
মুছে মুছে খেয়ালে অনায়াসে-ই তাকে
দূর কত করেছ! ইরেজার তুমি কী
যে এক অদ্ভুত! দূরত্ব ওপিঠে
বিস্মরণ সহজ ঠোঁট-চোখে জলজ
নিজে কত-ত দূর! নির্মল তোমাকে
আনন্দ বরণে এবারে চায় যদি—
পেন্সিল! দুরাশা। আহ! দাগ মোছার,
ইরেজার, তুমি তো শুরু থেকে হারানো।