দুই কবির কবিতা

আহা দেশ ও দেশের ধারণা ॥ দিলারা হাফিজ

আহা, আমার সোনার বাংলাদেশ—বিপন্ন ও বিধুর যখন 
মহাভারতের অন্তর্ঘাতী জ্ঞাতি হত্যার আগুনে জ্বলছিল, 
সেই এক অস্থির সময়ের কথা বলছি।
পুড়ে পুড়ে ছাই হচ্ছে রক্ত দহনে—যেমন কৌরব ও পাণ্ডবগণ…হস্তিনাপুরের 
সেই সিংহাসন দখলের কথা বলছি, যা ছিল ধর্ম-অধর্মের এক মহাকাব্যিক লড়াই!
এ লড়াই ফিরে ফিরে আসে—যুগে-যুগান্তরে কিংবা শতাব্দী শেষে। 
তবু আসে—তখন মায়েদের মাতমে ধরণী দ্বিধা হয় উদ্বেগাকুল হয়ে ওঠে নির্জন বায়ুমণ্ডল।

আমিও মা, জনে জনে জোড়হাতে ক্ষমা ভিক্ষা করেছি!
প্রাণের চেয়ে ভালোবাসি দেশ কিন্তু কে শোনে আমার কথা—
শূন্য হাত, অশক্ত দুই পা, অধিকন্তু ভঙ্গুর দেহ।
উপায়ান্তর না পেয়ে আমার সন্তান তখন ভগ্নহৃদয় 
মায়ের মন সারাতে ওসাগা বীচের দিকে বেরিয়ে পড়ে সপরিবারে।
এখানে সবাই তখন সমুদ্র দর্শনে আত্মহারা এক নদী
আমার দুচোখে তখনো পৃথিবীর তিনভাগ জলের পরিভ্রমণ—
যার শেষ নেই, শব্দ নেই… সীমা নেই—শুধুই অতল…
একভাগ আমি আকুল হয়ে বসে পড়ি—নুন সমুদ্রের পাশে…
সমু্দ্রমাতার কাছে আমার অশ্রুজল জমা করি—
খু-উ-ব,খু-ব-ই কম মূল্যে—
আমার দুচোখে যত জল ধরে—তা বিক্রি করে—জানি
আমার দেশের শ্রমজীবী একজন রিকশাওয়ালার 
সপরিবার একদিনেরও খাদ্য সংকুলান সম্ভব নয়!
কিন্তু এরচেয়ে বেশি কিছু করতে পারবো—সে ভরসা 
নেই যে আর! আমি এক ক্ষুদ্র প্রজা! পেশায় শিক্ষক!
নেশায় শব্দের কারিগর, শব্দে শব্দে জোড়া দিই কথা—
যদিও মহান একাত্তরে আমিই ছিলাম রণাঙ্গনে বহুধা!


অনুভব ॥ শিখা চৌধুরী 
ফুল বলতেই সুন্দর
পাতা বলতেই সবুজ, 
কাঁটা বলতেই ভীষণ জ্বালা
প্রেম বলতেই অবুঝ। 

আকাশ বলতেই অসীমতা
চাঁদ বলতেই আলো,
পাখি বলতেই কিচিরমিচির 
আঁধার বলতেই কালো। 

দুঃখ বলতেই কঠিন সময়
সুখ বলতেই ভালো,
মানুষ বলতেই জটিল-কুটিল
জ্ঞানের প্রদীপ জ্বালো।