তিন কবির কবিতা

ক্ষুব্ধ দিগন্ত ॥ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
আকাশ আজ রক্তমাখা চাদরে ঢাকা,
সূর্য ডুবে যায় ক্রোধের জ্বালায়,
দিগন্ত যেন দাঁতে দাঁত চেপে থাকা সৈনিক 
বাতাসে বাজে যুদ্ধের বাঁশি।
নদী থেমে গেছে, জলের বুকেও আগুন,
মেঘেরা বিক্ষুব্ধ, বজ্র যেন প্রতিবাদের ভাষা,
শান্ত পৃথিবী আজ রোষে কাঁপে 
মানুষ হারিয়েছে নিজেরই বিশ্বাস।

ক্ষুব্ধ দিগন্ত চেয়ে থাকে নিস্তব্ধ নগরে,
গগনের বুক ফুঁড়ে উড়ে যায় ধোঁয়া,
কোথায় হারালো নীল?
কোথায় সেই মমতা-ভরা আলো?

তবু এই ক্ষোভের ভেতরই জন্ম নেয় সকাল,
যেখানে নতুন সূর্য উঠবে আগুন পেরিয়ে 
দিগন্ত তখন আবার বলবে মৃদুস্বরে,
‘রাগ নয়, ভালোবাসাই শেষ পরিণতি।’
 
দীপাবলি ॥ তুষার গায়েন 
আদি সূচনাকালে কোন অন্ধকার গহ্বর হতে 
বিচ্ছুরিত হয়েছিল আলো—যে-কালো জমাট অন্ধকারে 
চমকালো তীব্র সাদা বিদ্যুতের জিহ্বা ! 
ক্ষুধা আর জৈবিক তাড়নায় তা ঢুকে গেল 
মুখের গহ্বরে অনন্তর বধির স্তব্ধতা ...
আর নৈরাজ্য যত অসুর উত্থান দিকে দিকে 
হত্যা, ধ্বংস, অপমান—আলো ঢাকা বোবা অন্ধকার 
ফের বিচ্ছুরণ, মহাপ্রলয়ঙ্কর বেশে চৈতন্যের জাগরণ 
চাপ চাপ জমাট অন্ধকার শুষে নিতে জাগে জিহ্বা 
টকটকে লাল দীপাবলি রাত—দীর্ঘ প্রলয়ের পর 
সুস্থির সকাল মানুষের জন্য কিছুকাল 
আবার অন্ধকার আসার আগে, 
এই চক্র নিত্য বহমান ...


ইলিউশন ॥  ফারহানা রহমান
ক্রমাগত বন্ধ করে চলেছি দুয়ার
অতীত পাহাড় হয়ে তবু
ফিরে আসে কাছে
ঐ জ্যোৎস্নাঘেরা রাতে!
ইলিউশন ! এক দুর্বোধ্য জীবনে?
আমি শঙ্খচিল হয়ে শুয়ে থাকি
নৈঃশব্দ্যের জলরঙে,
বিষণ্ণ কঠিন গুল্মবনে,
আর অবাক তাকিয়ে থাকি
ভ্যানগগের স্ট্যারি স্ট্যারি
নাইটের দিকে,
রিলকের সাথে হেঁটে যাই
সেই তটরেখার দুর্গচুড়ায় দেখি
বারুদের কুণ্ডলী পাকানো,
স্বচ্ছ ক্রিস্টালে ঝলসে যায়
দুচোখের ঘুম; আর
চৈতালি প্রেমের ভ্রান্তছায়া
হয়ে বসে রয়েছে যে বনভান্তে
তার সাথে বেঁধেছি জীবন
এক গন্তব্যহীন ট্রেনের কামরার ভেতর
খুঁজে চলেছি টর্চের আলো হয়ে
ধূসর রেখার মতো প্রবঞ্চক অলিগলি…