আজ ‘জাতীয় কন্যাশিশু দিবস’। আর এই দিবসের কথা শুনেই দুই চোখের পানি ছেড়ে দিলেন রাজধানীর মোহাম্মদপুর বসিলার নোফস গার্মেন্টস লিমিটেডের নারীকর্মী রহিমা খাতুন। আজ তো কন্যাশিশু দিবস। এই দিনে আপনি কাঁদছেন কেন?
কান্নার কারণ জানতে চাইলে ক্ষীণস্বরে বলতে শুরু করলেন তার জীবনের বিষাদ কাহিনী। বছর ছয় আগে দুই বছরের শিশুকন্যা ফাহিমাকে কোল থেকে কেড়ে নিয়ে স্বামী তাকে তালাক দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেন। বিচার সালিশ করে ফাহিমাকে কাছে পেলেও এক বছর আগে আবারও কন্যাশিশুকে তার বাবার কাছে ফেরত দিতে হয়েছে। গত এক বছর ধরে তিনি ফাহিমাকে দেখছেন না। কর্মক্ষেত্রে এলেও সারাক্ষণ একমাত্র আদরের কন্যার জন্য অশ্রু ভেজা থাকে রহিমার।
শারমিন বেগম। বয়স ১২। রহিমা খাতুনের সঙ্গে একই গার্মেন্টসে কাজ করে সে। শারমিনের বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজাহাটে। শিশু বয়সেই সে এখন গার্মেন্টস কন্যা। বেঁচে থাকার তাগিদে কর্ম খুঁজে নেওয়া শারমিন জানান, দুই বছর আগে মাকে হারিয়ে এখন সে প্রায়ই এতিম। বাবা থাকলেও নেই। শারমিনের মায়ের মৃত্যুর পর তার বাবা আরেকটি বিয়ে করেছে। প্রতিদিন সৎমায়ের অত্যাচার আর কানকথা শোনা। বাবার গালিগালাজ ছেড়ে সে এখন ঢাকায় থাকে দূর সম্পর্কের এক খালার কাছে। বেঁচে থাকার তাগিদে গার্মেন্টস কন্যা হয়ে সে এখন শিশুশ্রম দিচ্ছে।
মোহাম্মদপুরের অন্য আরেকটি গার্মেন্টস ওয়ান পিস ফ্যাশন লিমিটেডে কাজ করেন লিমা আক্তার। তিনি বলেন, আমার জন্মের পর বিষপান করতে গিয়েছিলেন আমার মা। পরপর আমরা চার বোন জন্ম নেওয়াতে মাকে রাখবেন না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন বাবা। মা আমাকে ‘মেয়ে-সন্তান’ দেখে বাবার ভয়ে বিষপানের চেষ্টা করলে আমার চাচীরা দেখে ফেলে এবং বোতল কেড়ে নেন।
মাসুদা খুব মিষ্টি হাসে। হরিণী চোখ ও শ্যামবর্ণের এই মেয়েটি কাজ করেন ঢাকা উদ্যান ফোর ব্রাদার্স গার্মেন্টসে। বাবা হারা ১৫ বছর বয়সী মাসুদা জাতীয় কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে তার মায়ের কাছে একটি গোলাপ উপহার চেয়েছেন। গোলাপ পেলেই ভীষণ খুশি হবেন। এর বেশি তার কিছুই চাইনা।