ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

পৌনে ৬ বছরে সড়কে নিহত ৩৪ হাজার ৩৭৭

আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৯:০১ পিএম

জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস আজ। দিনটি ঘিরে নানান আয়োজন থাকলেও সড়কে থামছে না মৃত্যুর সংখ্যা। প্রতিদিনই সড়কে ঝরে যাচ্ছে অসংখ্য প্রাণ। ২০১৮ সালে বাংলাদেশে সড়ক নিরাপত্তা সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি বিদ্যমান আইন সংশোধন করে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ করা হলেও কমছে না দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর সংখ্যা। গত পাঁচ বছর নয় মাসে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৩৪ হাজার ৩৭৭ জন। আহতের সংখ্যা প্রায়ই ৫০ হাজার।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি ও 'নিরাপদ সড়ক চাই' নিসচা এবং রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে সারা দেশে ৪০২টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন ৪১৭ জন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৬৫১ জন।

এর আগের বছর ২০২২ সালে সারা দেশে ৬ হাজার ৭৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে প্রাণ হারান ৯ হাজার ৯৫১ জন। আহত হয়েছেন ১২ হাজার ৩৫৬ জন। তবে ২০২২ সালের তুলনায় ২০২১ সালে সড়ক দুর্ঘটনা কিছুটা কম ছিল। ২০২১ সালে ৫ হাজার ৩৭১টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ৬ হাজার ২৮৪ জন। আহত হয়েছিলেন কমপক্ষে ৭ হাজার ৪৬৮ জন। ২০২১ সালের চেয়েও ২০২০ সালে সড়ক দুর্ঘটনা ও নিহতের সংখ্যা অনেক কম। ২০২০ সালে সারা দেশে মোট ৪ হাজার ৭৩৫টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে মারা যান ৫ হাজার ৪৩১ জন। আহত হয়েছেন ৭ হাজার ৩৭৯ জন।

সংগঠনগুলোর দেওয়া তথ্যে নিরাপদ সড়কের দাবিতে দেশব্যাপী তীব্র আন্দোলনের পরও ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেশি ছিল। ২০১৯ সালে সারা দেশে ৫ হাজার ৫১৬টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে নিহত হয়েছিলেন ৭ হাজার ৮৫৫ জন। এসব দুর্ঘটনায় আহতের সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার ৩৩০ জন। আর আন্দোলনের বছর ২০১৮ সালে ৩ হাজার ১০৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন ৪ হাজার ৪৩৯ জন। আহত হন সাড়ে ৭ হাজারের মতো।

সংগঠনগুলো জানায়, মহাসড়ক, জাতীয় মহাসড়ক ও জাতীয়, আন্তঃজেলা এবং আঞ্চলিক সড়কে এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর কারণে অধিকাংশ মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মইনুল হাসান।

তিনি খবর সংযোগকে বলেন, আঞ্চলিক সড়ক ও আন্তঃজেলা সড়ক ও মহাসড়কে ছোট এবং স্থানীয় যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি, সমস্ত বাস ও ট্রাকসহ পরিবহন শ্রমিকদের অসন্তুষ্টি, সড়ক পরিবহন খাতে সামগ্রিক নৈরাজ্য, জনসচেতনতার অভাব ও ট্রাফিক আইন না মানা সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।

খবর সংযোগকে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালনা, বিপদজনক ওভারটেকিং, সড়কের ক্রটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেড ফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা, রাস্তায় ফুটপাথ না থাকা বা ফুটপাথ বেদখলে থাকা, ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ ও ছোট যানবাহন বৃদ্ধি।

মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিআরটিএ ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে রোড সেফটি ইউনিট গঠিত হলেও মূলত গণমাধ্যমে কথা বলা ছাড়া দুর্ঘটনা প্রতিরোধে তাদের কোনো গবেষণা কার্যক্রম নেই। সড়ক দুর্ঘটনা থেকে মানুষকে রক্ষায় কোনো বাজেট নেই। ফলে প্রতি বছর সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ছেই।

সড়ক দুর্ঘটনারোধে পরামর্শও দিয়েছেন চিত্রনায়ক ও নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) সংগঠনের সভাপতি চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। খবর সংযোগকে তিনি বলেন, ট্রাফিক নির্দেশনা অমান্য করা, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, নিদির্ষ্ট স্থান ছাড়া যেখানে সেখানে যাত্রী উঠানো-নামানো, ওভারটেকিং, পাল্টাপাল্টি ও বেপরোয়াগতিতে গাড়ি চালানো, অতিরিক্ত যাত্রী ও মাল বোঝাই করা, ওভার ব্রিজ কিংবা আন্ডারপাস বা জেব্রা ক্রসিং থাকা সত্ত্বেও সেগুলো ব্যবহার না করার প্রবণতাকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সকল মহাসড়কে এবং প্রধান সড়কে একমুখী চলাচলের সিদ্ধান্ত নিয়ে দীর্ঘ এবং উচ্চতা সম্পন্ন সড়ক বিভাজন তথা রোড ডিভাইডারের ব্যবস্থা করতে হবে। মহাসড়ক ও প্রধান সড়ককে অবশ্যই নূন্যতম চার লেনে উন্নীত করতে হবে। পথচারীদের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য ফুটপাথগুলো দখলমুক্ত করে যেখানে ফুটপাথ নেই সেখানে ফুটপাথ তৈরির ব্যবস্থা করতে হবে এবং নিয়মিত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে পুনরায় যেন ফুটপাথ দখল না হয়-এ বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

দুর্ঘটনারোধে বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান প্রচারের পাশাপাশি স্কুলের পাঠ্যসূচিতে সড়ক দুর্ঘটনারোধের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করার যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তা অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে বলেও জানান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন।

WA
আরও পড়ুন