দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

জনপ্রিয়তাই তারকা প্রার্থীদের পুঁজি

সপ্তাহের চাকা ঘুরলেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। রাজনীতি সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের পাশাপাশি নির্বাচনের মাঠে এবারও আলো ছড়াচ্ছেন তারকা প্রার্থীরা। নির্বাচনের মাঠে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দেখা যাবে শোবিজ ও ক্রীড়াঙ্গনের জনপ্রিয় আট তারকাকে। তাদের মধ্যে দুজন ক্রিকেটার। বাকি ছয়জন এসেছেন সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকে। আটজনের মধ্যে পাঁচজনই লড়ছেন বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে। আর অপর তিনজনের মধ্যে দুজন স্বতন্ত্র এবং একজন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) এর প্রার্থী। খবর সংযোগের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন এই আট প্রার্থী। তারা তাদের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ও আশা-প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করেছেন।

অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর : অভিনয় শিল্পী আসাদুজ্জামান নূর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তৃতীয় মন্ত্রিসভায় (২০১৪-২০১৮) সংস্কৃতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রথমবার নীলফামারী-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এরপর টানা ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছেন বিনোদন জগতের এই কিংবদন্তী। এবারও একই আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন তিনি।

আসাদুজ্জামান নূর বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে টানা পাঁচবার মনোনয়ন দিয়েছেন। নেত্রী আমার ওপর আস্থা রেখেছেন এবারও। নীলফামারীর মানুষও আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। একজন সংসদ সদস্য হিসেবে আমি বারবারই চেষ্টা করেছি আন্তরিকতার সঙ্গে নেত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী জনগণকে সেবা দিতে। আমি আমার বাকি জীবনেও জনগণের সেবা করে যেতে চাই, সবার পাশে থাকতে চাই। জনগণের প্রচুর ভালোবাসা পেয়েছি, ভোটের মাঠেও সাড়া পাচ্ছি। ইনশাআল্লাহ এবারও বিপুল ভোটে বিজয় হবো।

কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম : দুইবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম বরাবরের মত এবারও আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন। তার নির্বাচনী এলাকা সিঙ্গাইর, হরিরামপুর ও মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার তিন ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মানিকগঞ্জ-২ আসন।

নৌকা প্রতীকে টানা তৃতীয়বারের মতো বিজয়ী কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম বলেন, আমার দল আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী আমাকে এবারও নির্বাচন করার সুযোগ দিয়েছেন। আগামী ৭ জানুয়ারি উৎসবমুখর পরিবেশে সুন্দর, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে ও আমরা জয়ী হয়ে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখব ইনশাআল্লাহ।

তিনি বলেন, আমার আসনে অন্য প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্ঘন আছে। টাকা ছড়াছড়ির অভিযোগও আছে। তবে আমরা রাজনীতি করি দেশের জন্য, জনগণের সেবা করার জন্য। জনগণ আমাকে ভালবাসে। আমাকেই ভোট দেবে। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।

সংগীতশিল্পী ডলি সায়ন্তনী : নব্বই দশকের জনপ্রিয় গায়িকা ডলি সায়ন্তনী রাজনীতির মাঠে এবারেই প্রথম। স্বপ্ন দেখছেন জনগণের ভোটে বিজয়ী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাবনা-২ আসন থেকে নতুন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) প্রার্থী তিনি।

তিনি বলেন, প্রচারণায় নেমে মানুষের ভালোবাসা পাচ্ছি। আমি ভাবতেই পারিনি যে, এখানকার সকল মানুষ আমাকে এতোটা ভালোবাসে ও পছন্দ করে। আশা করি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হলে আমি জয়ী হবো।

এলাকা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ডলি সায়ন্তনি বলেন, এলাকায় আসার পর দেখলাম অনেক কাজ বাকি আছে। যোগ্য জনপ্রতিনিধির অভাবে এলাকা অবহেলিত। আমি নির্বাচিত হলে ঢাকার সাথে সহজ যোগাযোগের জন্য সেতু নির্মাণ, এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করা, অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ সার্বিক পরিস্থিতির পরিবর্তন করবো। আগামী ৭ জানুয়ারি নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নোঙর মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য ভোটারদের আহ্বান জানান তিনি।

চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ : সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে গত কয়েক বছরে ধরেই দেখা যাচ্ছে চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদকে। এবারের সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১০ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন তিনি। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন এই অভিনেতা।

কথা হয় ফেরদৌসের সঙ্গে। তিনি বলেন, নির্বাচন করার উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের উন্নয়নে কাজ করতে চাই। সবখানে আমাকে পাবেন আপনারা। সুখ-দুঃখ সবখানেই আমাকে পাবেন। আমি নির্বাচনে জয়ী হতে পারলেও রাজনীতির পাশাপাশি অভিনয়টাও চালিয়ে যাবো। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের মানুষ উন্নয়নের মার্কা নৌকাকেই বেছে নেবে আগামী ৭ জানুয়ারি। এইদিন নৌকায় ভোট দিয়ে জনগণ আমাকে এমপি হিসেবে নির্বাচিত করবে বলে আশা করি।

ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা : বাংলাদেশ ক্রিকেটের উজ্জ্বল নক্ষত্র ধরা হয় মাশরাফি বিন মুর্তজাকে। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনীতিতে অভিষেক হয় জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক এই অধিনায়কের। নিজ জন্মভূমি নড়াইল-২ আসন থেকে এবারও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করছেন বর্তমান এই সংসদ সদস্য।

জনপ্রিয় এই ক্রিকেটার বলেন, আলহামদুলিল্লাহ রাজনীতিতে আসার পর থেকে মানুষের ভালো সাপোর্ট পাচ্ছি। সবাই সাপোর্ট করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নড়াইলবাসীদের জন্য কাজ করার  সুযোগ দিয়েছেন আমাকে। আবারও সুযোগ পেলে অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করতে চাই। মাশরাফি বলেন, আগামী ৭ জানুয়ারি আপনারা কষ্ট করে হলেও কেন্দ্রে যাবেন। আমি আপনাদের ভোট চাই। আপনাদের প্রত্যেকের ভোটটা খুবই জরুরি। আপনারা কেন্দ্রে যাবেন এবং নৌকা প্রতীকে ভোটটা দিবেন। আর আমার জন্য দোয়া করবেন।

ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান : ক্রিকেটে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান রাজনীতির মাঠে এবারই প্রথম। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাগুরা-১ আসন থেকে সাকিব আল হাসানকে নৌকার মাঝি করেছে আওয়ামী লীগ। জন্মস্থান মাগুরা-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে দারুণ উচ্ছসিত বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার।

সাকিব আল হাসান জানান, এটি আমার নিজের এলাকা। একজন ক্রিকেটার হলেও আসন্ন সংসদ নির্বাচনে আমি প্রার্থী হয়েছি। আগামী ৭ তারিখ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আমাকে সবাই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন। দেশের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখার জন্য দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে জয়যুক্ত করার আহ্ববান জানান সাকিব আল হাসান।

নায়িকা মাহিয়া মাহি : রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রাজনীতির মাঠে লড়ছেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন মাহি। কিন্তু তাকে মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। ট্রাক প্রতীক পেয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় খুব ব্যস্ত সময় পাড় করছেন এই অভিনেত্রী।

কথা হয় তার সঙ্গেও। তিনি বলেন, তানোর-গোদাগাড়ীর জনগণ আমাকে পেয়ে দারুণ খুশি হয়েছে। আমার এলাকার মানুষ অধীর আগ্রহে বসে আছেন যে তারা কখন ভোট দেবেন এবং সেবক আনবেন। এখানে পরিবর্তন চান। এখানকার মানুষ জমিদার প্রথার বিলুপ্ত চায়। নিজের খেয়ে, নিজের পরে, নিজের মতো করে বাঁচতে চায়। কাউকে ভয় পেয়ে বাঁচতে চায় না। ভোটাররা আমাকে কথা দিচ্ছেন তারা আমাকে ভোট দেবেন এবং আমি জয়ী হবো।

কৌতুক অভিনেতা চিকন আলী : চলচ্চিত্রের কৌতুক অভিনেতা শামিনুর রহমান ওরফে চিকন আলী নওগাঁ-৩ (বদলগাছী-মহাদেবপুর) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কেটলি প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। রাষ্ট্রীয় কোনো নির্বাচনে এই প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করছেন তিনি।

চিকন আলী বলেন, ভোটারদের আশ্বাসেই আমি এমপি প্রার্থী হয়েছি। এলাকার জনগণ আমাকে ভালোবাসে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, তারা আমাকে ভোট দিয়ে এমপি নির্বাচিত করবে। আমি কথা দিয়েছি এলাকার উন্নয়নে কাজ করবো। যদি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় তাহলে আমি জয় লাভ করবো ইনশাআল্লাহ।