সনাতনী নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে আদালত প্রাঙ্গণে নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলামের পরিচয় নিয়ে বিদেশি মিডিয়াগুলো বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। খবর রিউমর স্ক্যানার ডটকম’র।
এই ঘটনায় প্রকাশিত সংবাদে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স চট্টগ্রামের পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর বরাত দিয়ে দাবি করেছে, ‘আদালতের বাইরে (চট্টগ্রামে) বিক্ষোভের মধ্যে (চিন্ময়) দাসের পক্ষের একজন মুসলিম আইনজীবী নিহত হয়েছেন।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ আন্তর্জাতিক একাধিক মিডিয়া রয়টার্সের বরাত দিয়ে একই ভুল তথ্য প্রচার করেছে। এসব বিদেশি মিডিয়ার মধ্যে ভয়েস অফ আমেরিকা, আরব নিউজ, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, হিন্দুস্তান টাইমস, ট্রিবিউন ইন্ডিয়া, লাইভ মিন্ট, দ্য ওয়্যার ইত্যাদি অন্যতম।
রয়টার্সের বরাত ছাড়া একই দাবি করেছে ইন্ডিয়া টুডে (ইউটিউব), রিপাবলিক (এক্স), অপি ইন্ডিয়া (এক্স)।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নিহত সাইফুল ইসলাম আদৌ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের পক্ষের আইনজীবী ছিলেন না। বরং চিন্ময়ের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে লড়েছেন শুভাশীষ শর্মা। আর নিহত ছিলেন সাইফুল সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলামের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, তিনি ইসকন বিরোধী একাধিক পোস্ট বিভিন্ন সময়ে শেয়ার করেছেন, যা থেকে এটিই প্রমান হয়, তিনি ইসকনের অনুসারী কারো বিরুদ্ধে হওয়া মামলার আইনজীবী নন।
আইনজীবী সাইফুলের মৃত্যুর খবর মিডিয়ায় প্রকাশিত হয় মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে। এর আগে দুপুরে চিন্ময়ের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাটির শুনানি হয়। খবরে প্রকাশ, চিন্ময় দাসের পক্ষে আইনজীবী শুভাশীষ শর্মা জামিন শুনানি করেন। চিন্ময়ের আইনজীবী হিসেবে স্বরূপ কান্তি নাথের বক্তব্যও দেশের মিডিয়ায় প্রকাশ হয়।
চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এনামুল হক বলেন, ‘নিহত সাইফুল ইসলাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।’
মোহাম্মদ অ্যাডভোকেট এনামুল বলেন, সাইফুল ইসলাম আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তিনি ২০১৮ সালে জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হন। পরে তিনি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবেও নিবন্ধন পান।
এদিকে, এই দাবি সংক্রান্ত রয়টার্সের প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর নেটিজেনদের সমালোচনার মুখে পড়ে সংস্থাটি। পরে প্রতিবেদন থেকে দাবির অংশটি সরিয়ে নেয় রয়টার্স। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ একটি বিবৃতি দিয়েছে। তারা বলছে, ‘রয়টার্স বা কোনো সাংবাদিক এই বিষয়ে উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) লিয়াকত আলী খানের সাথে কথা বলেননি। ঘটনার সময়ে তিনি আদালত প্রাঙ্গণসহ আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার কাজে দায়িত্বরত ছিলেন। লিয়াকত নামে চট্টগ্রামে চার জন কন্সটবল আছে। তারাও কাউকে কোনো বক্তব্য দেননি।’