বিশ্ব মানবাধিকার দিবস আজ। ‘আমাদের অধিকার, আমাদের ভবিষ্যৎ, এখনই’- এই স্লোগানে সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে দিবসটি। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি গত দেড় যুগে তলানিতে ঠেকেছিল। মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিবাদে বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করেনি তৎকালীন শাসকরা।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশে গত তিন মাসে গুমের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুর সংখ্যাও কমে এসেছে। গুম হওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে সরকার গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন গঠন করেছে এবং বিপুলসংখ্যক অভিযোগ জমা পড়েছে। ‘আজ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে’ গুম হওয়া মানুষগুলোর পরিবারগুলোর প্রত্যাশা- তাদের প্রিয়জন ফিরে আসবেন।
গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস্য ও মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন গণমাধ্যমকে বলেছেন, ১৫ বছর ধরে নির্বিচারে গুম এবং হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিচার বিভাগ ধ্বংস হয়েছে। তবে ৫ আগস্টের পর থেকে দ্রুত পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে। সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে গুমসংক্রান্ত কমিশন গঠন করেছে এবং আমরা সেই আন্তরিকতা লক্ষ্য করছি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েক বছর বাংলাদেশে মানবাধিকার দিবসটি অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে পালিত হয়েছে। ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র্যাব ও বাহিনীটির সাবেক কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে দিনটিকে ঘিরে নানা রাজনৈতিক তৎপরতা দেখা যায়। বিশেষ করে গুম হওয়া মানুষের স্বজন ও সরকারের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো মিলে নানা কর্মসূচি দিত। প্রিয়জনকে ফেরানোর আকুতি জানাতেন স্বজনরা। আর সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হতো, মানবাধিকার দিবস ঘিরে বিরোধী পক্ষ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে।
জানা গেছে, গত অক্টোবরে গুমসংক্রান্ত কমিশন গঠন হওয়ার পর ১ হাজার ৬০০ অভিযোগ পড়েছে। এর মধ্যে র্যাবের বিরুদ্ধে ১৭২টি, ৩৭টি সিটিসি, ডিবি ৫৫টি, ডিজিএফআই ২৬টি, পুলিশ ২৫টি এবং অন্যান্যভাবে গুমের ঘটনা ৬৮টি। এসব ঘটনা তদন্তে গিয়ে এসব বাহিনীর আটটি গোপন বন্দিশালা পেয়েছে কমিশন, যেখানে বছরের পর বছর গুম হওয়া ব্যক্তিদের রেখে নির্যাতন করা হতো।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানিয়েছে, চলতি বছরে দুজন গুমের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে একজন ফিরে এলেও, অন্যজন এখনও নিখোঁজ। তবে গত তিন মাসে কোনো নতুন গুমের ঘটনা ঘটেনি। এই সময়ের মধ্যে হেফাজতে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৮ জন।
বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণজমায়েতের আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবার এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সদস্যরা একত্রিত হয়ে তাদের প্রিয়জনদের ফেরত পাওয়ার দাবি জানাবেন।