জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা জুলাই অভ্যুত্থানেও প্রেরণা যুগিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি বলেন, ‘জাতীয় কবি হিসেবে এতোদিন তার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ছিল না। এবার এটি করা হয়েছে। তবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিতে লেখা থাকুক বা না থাকুক, কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের সবার মাঝেই জাতীয় কবি হয়ে হিসেবে ছিলেন। এখন এটা আনুষ্ঠানিকতা তৈরি হল।’
কাজী নজরুল ইসলামকে ‘বাংলাদেশে জাতীয় কবি’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির গেজেট প্রকাশ উদযাপন উপলক্ষে বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ‘নজরুল র্যালি’তে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন উপদেষ্টা।
উপদেষ্টা জানান, নজরুলের গান নিয়ে রক অ্যালবাম বের করা এবং কনসার্ট আয়োজনের ব্যাপারে নজরুল ইন্সটিটিউট কাজ করছে।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউটের আয়োজনে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে নজরুলের সমাধিতে গিয়ে শেষ হয় শোভাযাত্রা। এসময় নজরুলের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি হামদ ও নাত পরিবেশন করা হয়।
নজরুলের গান, কবিতাকে আরও বেশি ছড়িয়ে দিতে নজরুল ইন্সটিটিউট কাজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন উপদেষ্টা ফারুকী।
আয়োজনে নজরুলের হামদ ও নাত পরিবেশন করেন সংগীতশিল্পী ফেরদৌস আরা, নাশিদ কামাল, ইয়াকুব আলী খান ও সালাউদ্দিন আহমেদ। সবশেষে কবির আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া করা হয়।
বাংলাদেশের মানুষ কাজী নজরুল ইসলামকে ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে জানলেও তার কোনো দালিলিক স্বীকৃতি ছিল না। গত ২৪ ডিসেম্বর ‘জাতীয় কবি’ স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে সরকার।
১৯৭২ সালের ৪ মে যে-দিন কাজী নজরুল ইসলাম দেশে ফেরেন, গেজেটে সেদিন থেকে তাকে জাতীয় কবির স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
১৮৯৯ সালের ২৪ মে (১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম। বৈচিত্র্যময় জীবনের অধিকারী নজরুল ছেলেবেলায় পরিচিত হয়ে ওঠেন ‘দুখু মিয়া’ নামে।
নজরুল ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস।
১৯৪২ সালে দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে ক্রমশ বাকশক্তি হারান নজরুল। স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসুস্থ কবিকে ভারত থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন।
১৯৭৬ সালের জানুয়ারিতে কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি তাকে ভূষিত করা হয় বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে।
ওই বছর ২৯ অগাস্ট (১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্র) ঢাকায় মারা যান কবি এই বিদ্রোহী কবি। তাকে সমাহিত করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের উত্তর পাশে।