পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার তিন দিনের সরকারি সফরে ঢাকা এসেছেন। শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পশ্চিম ও পূর্ব) ড. মো. নজরুল ইসলাম।
এদিন পাকিস্তান হাইকমিশনের আমন্ত্রণে ইসহাক দারের সঙ্গে বৈঠক করে এনসিপি-জামায়াত ও বিএনপির প্রতিনিধি দল। বৈঠক শেষে নেতারা জানান, ভারতের বাধা এড়িয়ে সার্ক কার্যকরের উপায়, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, আগামী নির্বাচন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকে বিএনপি পক্ষে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, দলের ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ অংশ নেন। তবে বৈঠক শেষে বিএনপির কোনো নেতা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি।
এছাড়া শনিবার বিকালে জামায়াতের পক্ষে দলটির নায়েবে আমীর আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের ও এনসিপির হয়ে সদস্য সচিব আখতার হোসেনে নেতৃত্বে দুইটি প্রতিনিধি দল পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের জানান, আলোচনায় দুদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়, আঞ্চলিক বাণিজ্য এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের বিভিন্ন দিক উঠে আসে।
তাহের বলেন, সার্ক চালু করাসহ ভ্রাতৃপ্রতিম মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি কিছুটা একপেশে ছিল। এখন বাংলাদেশ সরকারসহ সবাই মনে করছে- এ অঞ্চলের সব প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা দরকার।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যে যেসব অমীমাংসিত ইস্যু রয়েছে, সেগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির ওপর জোর দেয়া হয়েছে। জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কিত আলোচনা প্রসঙ্গক্রমে এসেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
রোববার (২৪ আগস্ট) প্রধান উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে দুই দেশের সরকারি ও কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের ভিসা বিলোপসহ পাঁচ-ছয়টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের আখতার হোসেন বলেন, ইসহাক দারের সঙ্গে এনসিপির ৭ সদস্যের প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়েছে। পাকিস্তান দূতাবাস থেকে আমাদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের জনগণের চিন্তা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আগে যে শত্রুভাবাপন্ন সম্পর্ক ছিল সেখান থেকে উন্নতির সুযোগ আছে। এ সময় একাত্তরের ইস্যু অবশ্যই ডিল করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে জানিয়ে আখতার হোসেন বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ যেসব বিষয় উন্নয়ন করা যায়, সে বিষয়ে কথা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যকার সম্পর্ক হবে ভ্রাতৃত্বের, কোনো হেজিমনি (আধিপত্য) থাকবে না।
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় পানিকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য সংকট ও যুদ্ধের ঝুঁকির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে এসেছে। নদীমাতৃক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা এবং পাকিস্তানের অতীত অভিজ্ঞতা বিনিময় করা হয়েছে।
তিনি বলেন, পাকিস্তান গত ১৫-২০ বছর ধরে ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে অগ্রগতির চেষ্টা করেছে। বাংলাদেশের ওষুধ খাতের উৎপাদন খরচ তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় এ খাতে দুই দেশের মধ্যে বড় সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এতদিন তা বাস্তবায়ন হয়নি।
এ ছাড়া সাংস্কৃতিক বিনিময়, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম ও প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
এনসিপির সদস্যসচিব জানান, গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে নতুন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। সে প্রেক্ষাপটেও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সার্ক বর্তমানে অকার্যকর অবস্থায় আছে ভারতের কারণে। কীভাবে সার্ককে আবার সক্রিয় করা যায় এবং আঞ্চলিক অর্থনীতিতে সমৃদ্ধি আনা সম্ভব- এ বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী মনে করেন, পাকিস্তান যেহেতু পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র, তাই দক্ষিণ এশিয়ায় তাদের প্রভাব রয়েছে। এ প্রভাব কাজে লাগিয়েই আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।