ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে। এই লক্ষ্যে চূড়ান্ত রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বুধবার (২৭ আগস্ট) কমিশনের বৈঠকে রোডম্যাপ অনুমোদনের পর বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) দুপুর আড়াইটায় সংবাদ সম্মেলনে এটি প্রকাশ করেন নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।
ইসি জানায়, এবারের নির্বাচনি রোডম্যাপে ২৪টি বিষয়কে ২০৭টি ধাপে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। যদিও ভোটগ্রহণ বা তফসিলের নির্দিষ্ট তারিখ এখনও নির্ধারণ করা হয়নি, তবে নির্বাচন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে, রোজার আগেই হবে এমনটাই জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন।
কমিশনের কয়েকজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে রাজনৈতিক দলসহ সকল অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে এ রোডম্যাপ বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে। নির্বাচনী রোডম্যাপে যে ২৪টি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে ধাপে ধাপে কাজ এগোবে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হলো:
অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ: নির্বাচনকেন্দ্রিক আট শ্রেণির অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ করবে ইসি। রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও সাংবাদিকসহ অংশীজনের সঙ্গে এ সংলাপ সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হবে। শেষ হতে সময় লাগবে দেড় মাস। চলবে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত।
ভোটার তালিকা হালনাগাদ: ইতোমধ্যে দ্বিতীয় ধাপের সম্পূরক খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে যা চূড়ান্ত করা হবে ৩১ আগস্ট। আর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ৩০ নভেম্বর। এজন্য খসড়া প্রকাশ হবে ১ নভেম্বর।
নির্বাচনি আইনবিধি: সকল আইনবিধি ৩১ আগস্টের মধ্যে সংশোধনের প্রস্তাব ও প্রণয়ন করা হবে। এছাড়া সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ আইন সংশোধন, ভোটার তালিকা আইন সংশোধন, সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র নীতিমালা ও ব্যবস্থাপনা চূড়ান্ত, দেশি, বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক নীতিমালা চূড়ান্ত, নির্বাচন পরিচালনা (সংশোধন) ২০২৫ প্রতীকসহ, নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন ১৯৯১, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন ২০০৯; এগুলো আইন মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন আছে যা ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করার আশা রয়েছে ইসির।
রাজনৈতিক দল নিবন্ধন: ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন চূড়ান্ত করা হবে। এর আগে ৩১ আগস্টের মধ্যে প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ দলগুলোর মাঠ পর্যায়ের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি।
সীমানা নির্ধারণ: সংসদীয় আসনের সীমানা পুনঃ নির্ধারণ ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ করবে ইসি। আর ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জিআইএস ম্যাপ প্রস্তুত ও প্রকাশ করবে তারা।
রোডম্যাপে আরও যেগুলো থাকছে তার মধ্যে রয়েছে, নির্বাচন পর্যবেক্ষক নিবন্ধন ২২ অক্টোবরের মধ্যে চূড়ান্ত করে ১৫ নভেম্বর নিবন্ধন সনদ প্রদান করা হবে। বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের অনুমতি প্রদানে যাবতীয় কার্যক্রম শেষ করা হবে ১৫ নভেম্বর মধ্যে। এদিকে ১৫ নভেম্বর মধ্যে নির্বাচনী তথ্য প্রচারের জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়, আইসিটি মন্ত্রণালয়, টিএন্ডটি, বিটিআরসিসহ বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর কোম্পানির সঙ্গে সভা করবে ইসি।
৩১ অক্টোবরের মধ্যে মাঠ প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও ব্রিফিংয়ে যোগদানের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হবে। নির্বাচনী ম্যানুয়েল, নির্দেশিকা, পোস্টার ইত্যাদি মুদ্রণ শেষ করা হবে ১৫ সেপ্টেম্বর মধ্যে। নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ২৯ আগস্ট থেকে ভোটগ্রহণের ৪ থেকে ৫ দিন আগে যাবতীয় প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শেষ করবে ইসি।
নির্বাচনের সকল প্রকার মালামাল সংগ্রহ ও বিতরণ কার্যক্রম শেষ করা হবে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে। ব্যবহার উপযোগী স্বচ্ছ ব্যালট চূড়ান্ত করা হবে ৩০ নভেম্বর মধ্যে। ১৫ নভেম্বরে মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাজেট চূড়ান্ত হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনূকূলে অর্থ বরাদ্দে জন্য বৈঠক ১৬ নভেম্বর থেকে ২০ নভেম্বর মধ্যে।
নির্বাচনের জন্য জনবল ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করতে চায় ইসি। এছাড়া ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত শেষ হবে ৩০ সেপ্টেম্বরে মধ্যে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রথম সভা হবে ২৫ সেপ্টেম্বর। ৩১ অক্টোবরের আগে আইসিটি সংক্রান্ত সকল কাজ শেষ করতে চায় কমিশন।
ইসি সচেতনতামূলক প্রচার কাজ শেষ করতে চায় ৩০ নভেম্বরের মধ্যে। টেলিযোগাযোগব্যবস্থা সচল রাখা, ফলাফল কীভাব প্রকাশ ও প্রচার করা হবে, বেসরকারি ফলাফল প্রচার সংক্রান্ত কার্যক্রম নির্ধারণ এবং ২০২৬ সালের জানুয়ারির মধ্যে প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ব্যালটে ভোটের যাবতীয় কার্যক্রম শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির।
আগামী বছর ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে রোজার আগে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সংক্রান্ত চিঠিও দেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, ভোটের তারিখের প্রায় দুই মাস আগে তফসিল ঘোষণা করা হবে। নির্বাচন কমিশন সভায় আলোচনা শেষে জানানো হয়, ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল দেবে ইসি।