আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। বৈঠকে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরিতে সরকারকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত হয় এই দ্বিতীয় দফার সংলাপ। এতে উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলন, এবি পার্টি, গণ অধিকার পরিষদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলাম, এলডিপিসহ বেশ কয়েকটি দলের প্রতিনিধি।
বৈঠকে নেতারা নির্বাচন পদ্ধতি, প্রশাসনের দলীয়করণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, নির্বাচনী সহিংসতা, বিচার ও সংস্কার এমন নানা ইস্যুতে উদ্বেগ ও পরামর্শ তুলে ধরেন। কিছু দল প্রভাবশালী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানায়, আবার কেউ কেউ প্রশাসনের দলবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বরখাস্তের পরামর্শ দেন।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি জানান, নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক পরিবেশ এখনো অনিশ্চিত। প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকার পুনর্গঠন করতে ব্যর্থ হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এতে ভোটের পরিবেশ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে।
তিনি একটি সমন্বিত নির্বাচন পরিবেশ কমিটি গঠনের পরামর্শ দেন, যেখানে রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি থাকবে।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, সরকারের কার্যক্রমে শৃঙ্খলার অভাব স্পষ্ট। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ঘটনার মাধ্যমে দেখা গেছে, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে।
তিনি নির্বাচন পরিচালনায় অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের পরামর্শ দেন, যাতে সরকারের টিমে অন্তত কেউ নির্বাচন বিষয়ে অভিজ্ঞ থাকেন।
গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান দাবি করেন, আমরা দেখছি দুটি সরকার কাজ করছে একটি অন্তর্বর্তী সরকার, আরেকটি অদৃশ্য সরকার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের বর্তমান কর্মকর্তারা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করছে না।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন বলেন, যে লাউ সেই কদু করে নির্বাচন হলে জাতির প্রত্যাশা পূরণ হবে না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে। এখনই সন্ত্রাস বন্ধ না হলে নির্বাচনের সময় তা আরও বাড়বে।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুর রহমান ইসলামাবাদী বলেন, সংবিধানে আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল করতে হবে। শাপলা চত্বরে গণহত্যার বিষয়টি সরকার স্বীকার করুক।
তিনি আরও দাবি করেন, আওয়ামী সরকারের চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও প্রশাসনের দোসরদের গ্রেপ্তার ও বহিষ্কার করতে হবে।
এলডিপির সেক্রেটারি জেনারেল রেদোয়ান আহমেদ বলেন, বিগত সরকার প্রশাসনে এমনভাবে দলীয় লোক বসিয়েছে যে তা এখন নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। প্রশাসনের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত পরিবর্তন না হলে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।
বৈঠকের শেষ দিকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এই নির্বাচন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সবাই মিলে তা মোকাবিলা করা ছাড়া উপায় নেই। তিনি স্বীকার করেন, নির্বাচন পরিচালনায় নিয়োজিত বর্তমান টিমে নিরপেক্ষ নির্বাচনের পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই, তবে সব দলকে নিয়েই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা চলছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। আগের বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ আরও কয়েকটি দলের নেতারা অংশ নেন। নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের যৌথ কার্যক্রম ও ভূমিকা নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা ও বিতর্ক চলছে।