বিশ্ব পর্যটন দিবস আজ শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর)। বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে দিবসটি। জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থা (UNWTO) ১৯৮০ সাল থেকে দিনটি উদযাপন করে আসছে যা বিশ্ব পর্যটনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত। ‘পর্যটন শুধু অর্থনীতির জন্য নয়, মানুষ ও পরিবেশের জন্য কেমন প্রভাব ফেলে, সেটাও গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে’ এটাই এবারের দিবসের আহ্বান।
বিশ্ব পর্যটন দিবসের মূল উদ্দেশ্য হলো আন্তর্জাতিক পরিসরে পর্যটনের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং এটি কীভাবে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মূল্যবোধকে প্রভাবিত করে, তা তুলে ধরা।
বিশ্ব পর্যটন দিবস উদযাপনের প্রস্তাবটি প্রথম দেন নাইজেরিয়ার নাগরিক ইগনেটিয়াস আমাদুয়া অ্যাটিগবি। ২০০৯ সালে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই অবদানের জন্য স্বীকৃতি দেওয়া হয়। দিবসটির প্রতীকী রঙ হলো নীল।
প্রথমে শুনলে অবাক লাগতে পারে যে পর্যটনের জন্য আলাদা একটা দিন আছে। কিন্তু যখন জানা যায়, বিশ্বজুড়ে প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজন পর্যটন ও ভ্রমণ খাতে কাজ করেন, তখন এর গুরুত্ব বোঝা যায়।
বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে এই খাত আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। তবে এই অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে কিছু গভীর সংকট তৈরি হচ্ছে মানুষের জীবনযাপন, পরিবেশ ও স্থানীয় সংস্কৃতির ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে ভ্রমণ ও পর্যটন।
ভ্রমণপ্রেমী লাখো মানুষ আকর্ষণীয় শহর ও প্রাকৃতিক গন্তব্যে ভিড় করছে। এর ফলে রাস্তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, বড় বড় ট্যুর বাসে পথঘাট আটকে যাচ্ছে, স্থানীয়দের স্বাভাবিক যাতায়াতে বিঘ্ন ঘটছে। অনেক জায়গায় আন্তর্জাতিক কোম্পানি স্থানীয় ব্যবসা ধ্বংস করছে, আর পর্যটন অ্যাপার্টমেন্ট বাড়ির ভাড়াও বাড়িয়ে দিচ্ছে ফলে স্থানীয়রা নিজের এলাকা থেকে বিতাড়িত হচ্ছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- স্পেনের বার্সেলোনা শহরে স্থানীয়দের জন্য স্বল্পমেয়াদি ভাড়া সীমিত করা হয়েছে। ইতালির ভেনিসে বিশালাকৃতির ক্রুজ জাহাজ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে, যাতে শহরের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও ঐতিহ্য রক্ষা পায়।
ভরাভর্তি পর্যটন (mass tourism) পরিবেশের জন্য হুমকি। অবকাঠামো গড়তে গিয়ে ধ্বংস হচ্ছে বনভূমি ও প্রাকৃতিক বাসস্থান। প্রচুর পানি, মাটি, জমি ও জ্বালানি খরচ হচ্ছে।
পর্যটনের কারণে তৈরি হচ্ছে কঠিন বর্জ্য ও পানি দূষণ, শব্দ ও বায়ু দূষণ। জলবায়ু পরিবর্তনে অবদান রাখা কার্বন নিঃসরণ, যা বিশ্বব্যাপী নিঃসরণের ৫ শতাংশেরও বেশি।
‘ভ্রমণ হলো একটি বিশেষ সুযোগ, অধিকার নয়’ এই কথাটি বলেছেন Bruce Poon Tip, যিনি The Last Tourist ডকুমেন্টারির প্রযোজক। এই প্রামাণ্যচিত্রে উৎসাহ দেওয়া হয় সচেতনভাবে ভ্রমণের জন্য।
আমরা যখন কোনো জায়গায় ঘুরতে যাই, তখন ভাবতে হবে আমাদের খরচ কারা পাচ্ছে? স্থানীয় মানুষ, নাকি আন্তর্জাতিক কর্পোরেশন। আমরা কীভাবে দূষণ কমাতে পারি? আমাদের পদচারণায় পরিবেশ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে? প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সংস্কৃতি রক্ষায় আমাদের দায়িত্বশীল পর্যটক হতে হবে।
বিশ্ব পর্যটন দিবস শুধুই উদযাপনের দিন নয় এটি ভাবনার দিন। ভাবতে হবে, ভবিষ্যতের জন্য কী ধরনের পর্যটন আমরা চাই। পর্যটন যেন শুধু মুনাফার বিষয় না হয়ে ওঠে, বরং মানুষ, সমাজ ও প্রকৃতির জন্য সহনশীল এবং টেকসই হয় সেটাই হোক বিশ্ব পর্যটন দিবসের মূল বার্তা।