মহিষ অবহেলিত নয়, দেশের সম্পদ: ফরিদা আখতার

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, মহিষ বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অনন্য সম্পদ হলেও তা দীর্ঘদিন অবহেলিত ছিল। এই অবহেলা যেন আর না হয়, সে লক্ষ্যে সরকার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাবে।

বুধবার সকালে সাভারের মহিষ প্রজনন ও উন্নয়ন খামারে বাংলাদেশ বাফেলো অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘বৈজ্ঞানিক সম্মেলন–২০২৫’–এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, মহিষের দই ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের একটি জিআই পণ্য হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। তিনি বলেন, মহিষের দুধ থেকে শুধু দই নয়, চিজসহ আরও নানা পণ্য তৈরি সম্ভব। প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি সহায়তা দিলে খামারিরা নতুন বাজারে প্রবেশ করতে পারবেন। এসব পণ্য রপ্তানিযোগ্য হিসেবেও অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

ফরিদা আখতার আরও বলেন, কৃষি ও প্রাণিসম্পদ মিলিয়েই আসলে খাদ্য উৎপাদন সম্পূর্ণ হয়। কিন্তু বাস্তবে অনেকেই কৃষিকেই একমাত্র খাদ্য উৎপাদন ধরে নেন। কৃষিতে কীটনাশক ও আগাছানাশকের অতিব্যবহারে গরু, ছাগল ও মহিষ পর্যাপ্ত ঘাস পাচ্ছে না। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির নামে চারণভূমি হারিয়ে যাচ্ছে- এটা এক ভয়ংকর প্রবণতা।‌

এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও সমন্বিত পরিকল্পনা নেওয়ার আহ্বান জানান উপদেষ্টা।

তিনি আরও বলেন, প্রাণিসম্পদ খাতে মহিষের গুরুত্ব এখনো যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়নি। দেশে মহিষের সংখ্যা ক্রমেই কমছে, চারণভূমির অভাব এবং অবহেলাই এর মূল কারণ।

সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ বাফেলো অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রফেসর ড. মো. ওমর ফারুক। গেস্ট অব অনার ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. রুহুল আমিন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নীলুফা আক্তার, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান এবং বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. শাকিলা ফারুক।

সম্মেলনে ভারতের হরিয়ানার ড. প্রীতিশ প্রান্তিক কৃষকের অভিজ্ঞতা থেকে মুরাহ মহিষ ব্যবস্থাপনার মডেল তুলে ধরেন। ড. হিরন্ময় বিশ্বাস ইতালির দুধ উৎপাদন ব্যবস্থা এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে টেকসই মহিষ দুধ উৎপাদনের সম্ভাবনা নিয়ে বক্তব্য দেন। স্বাগত বক্তৃতা দেন ড. গৌতম কুমার দেব।

সম্মেলনে বিজ্ঞানী, সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা, কৃষক প্রতিনিধি এবং মহিষ সেবা–সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

পরে দুপুরে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার সাভারের কেন্দ্রীয় গো–প্রজনন ও দুগ্ধ খামার চত্বরে নবনির্মিত কেন্দ্রীয় কৃত্রিম প্রজনন ল্যাবরেটরির উদ্বোধন করেন। তিনি ল্যাবের বিভিন্ন কার্যক্রম ও আধুনিক সুবিধা পরিদর্শন করেন।

এসময় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান ও কেন্দ্রীয় কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের পরিচালক মো. শাহজামান খানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।