ক্ষুধা উৎপাদনের ব্যর্থতা নয়, এটি অর্থনৈতিক কাঠামোর ব্যর্থতা: ড. ইউনূস

বিশ্বজুড়ে খাদ্যের পর্যাপ্ত উৎপাদন থাকা সত্ত্বেও কোটি কোটি মানুষ ক্ষুধার্ত  যা উৎপাদনের সীমাবদ্ধতা নয়, বরং পরিকল্পিত অর্থনৈতিক কাঠামোর ব্যর্থতার প্রতিফলন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

সোমবার (১৩ অক্টোবর) ইতালির রাজধানী রোমে অনুষ্ঠিত বিশ্ব খাদ্য ফোরামের সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘২০২৪ সালে ৬৭৩ মিলিয়ন মানুষ ক্ষুধার্ত ছিল। অথচ আমরা পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদন করি। এটি উৎপাদনের ব্যর্থতা নয়, এটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ব্যর্থতা। এটি নৈতিক ব্যর্থতা।’

তিনি প্রশ্ন তুলেন, ‘বিশ্ব যেখানে অস্ত্র খাতে বছরে ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করে, সেখানে ক্ষুধা দূরীকরণে কয়েক বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করতে না পারা কি সভ্যতার নাম হতে পারে, এটাই কি অগ্রগতির সংজ্ঞা।’

বক্তব্যে তিনি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘গত বছর বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করেছে। গণতন্ত্র, শান্তি ও মানবাধিকারের নিশ্চয়তার জন্য এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল আমাদের তরুণ প্রজন্ম সাহসী ও আশাবাদী তরুণ-তরুণীরা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজ সেই তরুণরাই আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠনে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তারা নতুন বাংলাদেশ গড়ছে, যেখানে শাসনের কেন্দ্রে রয়েছে মানুষ।’

ইউনূস জানান, আগামী ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনকে তিনি “ন্যায়বিচার ও জনগণের ক্ষমতায়নের প্রতি অঙ্গীকারের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ” হিসেবে উল্লেখ করেন।

বিশ্ব খাদ্য ব্যবস্থা পরিবর্তনে ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের প্রস্তাব করেন অধ্যাপক ইউনূস। সেগুলো হলো-

১. ক্ষুধা-সংঘাত চক্র ভাঙতে হবে- যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে, সংলাপ শুরু করতে হবে, সংঘাতপূর্ণ এলাকায় খাদ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।

২. অঙ্গীকার পূরণ করতে হবে- এসডিজি অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি রাখতে হবে, জলবায়ু পদক্ষেপকে গুরুত্ব দিতে হবে, দুর্বল জনগোষ্ঠীর স্থিতিশীলতা গড়তে সহায়তা করতে হবে।

৩. আঞ্চলিক খাদ্য ব্যাংক তৈরি করতে হবে- যাতে ধাক্কা মোকাবিলা ও সরবরাহ চেইন স্থিতিশীল করা যায়।

৪. স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সৃষ্টি ও সহায়তা করতে হবে- বিশেষত তরুণ উদ্যোক্তা, কৃষক, নারী ও খাদ্যপ্রক্রিয়াকর্মীদের জন্য অর্থ, অবকাঠামো ও বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব দিতে হবে।

৫. রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা বন্ধ করতে হবে- বাণিজ্যনীতি যেন খাদ্যনিরাপত্তাকে সহায়তা করে, ক্ষতি না করে।

৬. প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে- বিশেষত গ্লোবাল সাউথ ও গ্রামীণ তরুণ-তরুণীদের জন্য।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা একটি মানবিক, ন্যায়ভিত্তিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বিশ্ব গঠন করতে পারি, যেখানে কেউ ক্ষুধার্ত থাকবে না।