জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত অনুলিপি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে পাঠিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের জনসংযোগ বিভাগ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে এ অনুলিপিতে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে কোনো সুপারিশ থাকছে না বলে জানা গেছে। এ সংক্রান্ত প্রস্তাব পরে অন্তর্বর্তী সরকার ও দলগুলোকে আলাদাভাবে দেয়া হবে বলেও জানা যায় কমিশন সূত্রে।
এর আগে গত ১১ সেপ্টেম্বর রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই সনদের যে খসড়া পাঠানো হয়েছিল, মূলত সেটি চূড়ান্ত আকারে মঙ্গলবার আবার পাঠানো হচ্ছে। চূড়ান্ত এই অনুলিপিতে মূল বিষয়বস্তুর কোনো পরিবর্তন করা হয়নি, শুধু কিছু ভাষাগত সংশোধন করা হয়েছে। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে ঐকমত্য কমিশন। এ আয়োজনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে সহায়তা করছে সংস্কৃতি-বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। আগ্রহী জনগণের অংশগ্রহণের সুবিধার্থে অনুষ্ঠানটি শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে কমিশন এ অনুষ্ঠানটি ১৫ অক্টোবর করার ঘোষণা দিয়েছিল।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য গঠন করে ছয়টি সংস্কার কমিশন (সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন)। পরবর্তীতে এসব সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য তৈরি করা হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এই কমিশন সংস্কার নিয়ে দফায় দফায় ৩০টি দলের সঙ্গে আলোচনা করে।
জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ৩০টি রাজনৈতিক দল। প্রতিটি দল থেকে জুলাই সনদে সই করবেন দুইজন প্রতিনিধি। এরই মধ্যে জুলাই সনদে সই করতে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো তাদের দুজন করে প্রতিনিধির নাম ঐকমত্য কমিশনে পাঠিয়েছে।
জুলাই জাতীয় সনদের তিনটি ভাগের প্রথমটিতে আছে সনদের পটভূমি, দ্বিতীয় ভাগে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব এবং তৃতীয় ভাগে আছে সনদ বাস্তবায়নের ৭ দফা অঙ্গীকারনামা।
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোট এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৩ হাজার অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
জুলাই সনদ প্রণয়নে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর মধ্যে রয়েছে- (১) ১২ দলীয় জোট; (২) আমজনতার দল; (৩) আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি); (৪) ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ; (৫) ইসলামী ঐক্যজোট; (৬) খেলাফত মজলিস (৭) গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি); (৮) গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য; (৯) গণফোরাম; (১০) গণসংহতি আন্দোলন; (১১) জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ; (১২) জাকের পার্টি; (১৩) জাতীয় গণফ্রন্ট; (১৪) জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি); (১৫) জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি; (১৬) জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম); (১৭) জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট; (১৮) নাগরিক ঐক্য; (১৯) বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস; (২০) বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-বাংলাদেশ জাসদ; (২১) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি; (২২) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী; (২৩) বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি; (২৪) বাংলাদেশ লেবার পার্টি; (২৫) বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি; (২৬) বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ; (২৭) বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী); (২৮) বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ; (২৯) বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টি (বিএসপি); (৩০) বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি; (৩১) ভাসানী জনশক্তি পার্টি; (৩২) রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন; (৩৩) লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি।
উল্লেখিত দলগুলোর কাছে সন্ধ্যায় জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত অনুলিপি পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
অনুষ্ঠানে জুলাই সনদে স্বাক্ষরের জন্য এরই মধ্যে আমন্ত্রিত দলগুলো দুজন করে প্রতিনিধির নাম কমিশনের কাছে পাঠিয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত সব দল সনদে সই করবে কি-না তা এখনও নিশ্চিত নয়। কারণ ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশমালা এখনও চূড়ান্ত করতে পারেনি। এ প্রক্রিয়ায় বিশেষ করে বাম দলগুলো ও কয়েকটি বড় রাজনৈতিক দলের অবস্থান এবং আপত্তি এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে প্রস্তুত করা হয় জুলাই জাতীয় সনদের খসড়া। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে দুদফা আলোচনায় রাষ্ট্র সংস্কারের ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্যে পৌঁছে রাজনৈতিক দলগুলো।