চব্বিশের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিত্ব, সমন্বয়ক, সংসদ-সদস্য প্রার্থী এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে আন্দোলনের সম্মুখসারির কয়েকজনকে গানম্যান দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাদের আত্মরক্ষার প্রয়োজনে ব্যক্তিগত অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়ার বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির বৈঠক শেষে ব্রিফ করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, দেশে নিরাপত্তা ইস্যুতে কোনো শঙ্কা নেই। তবে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এনসিপির ৬ নেতা এবং প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের সম্পাদকসহ নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকা ২০ জনকে গানম্যান দেয়া হয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘যারা হিটলিস্টে বা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছেন, তাদের আমরা গানম্যান দিয়ে দিয়েছি। আমাদের যে ডিজিএফআই, এনএসআই এবং এসবি আছেন- তারা নিজেরা বসে কারা কারা নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাদের তালিকা করেছেন। তাদের গানম্যান দেওয়া হয়েছে, অনেকে অবশ্য গানম্যান নিতেও চাননি।’
এদিকে পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, এই তালিকায় রয়েছেন-অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা। গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁনও গানম্যান পাচ্ছেন।
এছাড়া বেশ কয়েকজন রাজনীতিক ও সংসদ-সদস্য প্রার্থী গানম্যান ও অস্ত্রের লাইসেন্স চেয়ে আবেদন করেছেন। তাদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানের জন্য সার্বক্ষণিক গানম্যান ও বাসভবনের নিরাপত্তার জন্য সশস্ত্র পুলিশ সদস্য চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছে জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব ইউনুস আহম্মেদ সেখ প্রমুখের জন্যও।
এর বাইরে ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী আন্দোলনে সোচ্চার থাকা শহীদ ওসমান হাদির পরিবারকে দেয়া হচ্ছে বিশেষ নিরাপত্তা। হাদির এক বোন পাচ্ছেন লাইসেন্স ও গানম্যান। অন্য সদস্যদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক পুলিশি নিরাপত্তা দেয়া হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের উচ্চপর্যায়ের সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, নিরাপত্তা, গানম্যান অথবা অস্ত্রের লাইসেন্স চেয়ে এখন পর্যন্ত ১৫ জন রাজনীতিবিদের আবেদন তাদের কাছে এসেছে। সংখ্যাটি দিন দিন বাড়ছে। অনেকে খোঁজ নিচ্ছেন, কীভাবে আবেদন করতে হয়। রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি ২৫ জনের মতো সরকারি কর্মকর্তাও অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন।
এ বিষয়ে পুলিশের আইজি বাহারুল আলম বলেন, ‘যারা বেশি ভালনারেবল (নিরাপত্তা ঝুঁকিতে) রয়েছেন তাদের একজন অস্ত্রধারী রক্ষী দিয়েছি। যারা কম ঝুঁকিতে আছেন তাদের কিছু পরামর্শ দেয়া হয়েছে যে, কীভাবে চলাফেরা করবেন। কোন সময় কখন কাকে কি জানাতে হবে।’
আরেক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। গোয়েন্দারা যাদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসাবে চিহ্নিত করেছেন এবং যাদের নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করছেন, তাদের তালিকা করা হয়েছে। সেই তালিকা বিশ্লেষণ করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করছি। যারা নিরাপত্তা চাচ্ছেন তাদের সবাই গানম্যান দাবি করেন। গানম্যানের পাশাপাশি অস্ত্রও চেয়েছেন কেউ কেউ। অস্ত্রের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং জেলা প্রশাসকের ওপর নির্ভর করছে।
তিনি বলেন, ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এবং পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পক্ষ থেকেও গানম্যান দেয়া শুরু হয়েছে। তবে সবাইকে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, গানম্যান চাওয়া হয়েছে অনেকের জন্য। এত গানম্যান সরবরাহ পুলিশের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে ‘পটেনশিয়াল থ্রেট’ আছে তাদের দেয়া হচ্ছে।’
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘গানম্যান দেয়ার ক্ষেত্রে অনেকাংশেই সমস্যা হচ্ছে। কারণ, তাদের অনেকেই ছাত্র। অনেকে রিকশায় চড়েন। কেউ পাবলিক যানবাহনে চলাচল করেন। এসব ব্যক্তিদের গানম্যান দেওয়া কঠিন। কীভাবে এর সমাধান করা যায় তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।’
থার্টি ফার্স্ট নাইটে আতশবাজি ফোটানো যাবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ওসমান হাদি হত্যা মামলা: আইন উপদেষ্টা
পুরো দেশের মানুষ নির্বাচনের অপেক্ষায়: সিইসি
বাংলাদেশ বীরদের দেশ: প্রেস সচিব