প্রধান উপদেষ্টাকে ৬ মানবাধিকার সংস্থার চিঠি

মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা রোধে একগুচ্ছ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি লিখেছে ছয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা।

রোববার (১৯ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) ওয়েবসাইটে ওই চিঠি প্রকাশ করা হয়েছে।

চিঠিতে গুম-খুনের বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে।

ওই ছয় মানবাধিকার সংস্থা হলো—সিভিকাস, কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে), ফর্টিফাই রাইটস, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ), রবার্ট এফ. কেনেডি হিউম্যান রাইটস এবং টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট।

চিঠিতে জুলাই বিপ্লব ও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মৌলিক স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, আইন সংস্কার শুরু করা এবং গুম ও অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার তদন্তের মতো উদ্যোগের প্রশংসা করা হয়েছে। চিঠিতে মানবাধিকার বিষয়ে ১২টি সুপারিশ স্থান পেয়েছে। 

জুলাই অভ্যুত্থানকালে ও বিগত ১৫ বছরে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতনসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে প্রয়োজনীয় আইনি কাঠামো ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলাসহ যেকোনো মামলার ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান ঘোষণা করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে ওই ছয় মানবাধিকার সংস্থা।

একই সঙ্গে র্যাব বিলুপ্ত করাসহ নিরাপত্তা খাত সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থা ছয়টি। এ ছাড়া গুমকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে আইনে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে। চিঠিতে প্যারিস প্রিন্সিপালের আওতায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে স্বাধীন ও কার্যকর করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

আইনি সংস্কার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের সাইবার সিকিউরিটি অধ্যাদেশ, সন্ত্রাসবিরোধী আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন ও মানহানির ধারা আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী সংশোধন করতে হবে।

খসড়া ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা অধ্যাদেশ এবং খসড়া জাতীয় তথ্য ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে চিঠিতে।

ছয় মানবাধিকার সংস্থা আরও বলেছে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করুন এবং সাংবাদিকদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার এবং আটক থেকে রক্ষা করুন। ২০২৪ সালের আগে ও পরে দায়ের করা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা বাতিল, নির্বিচারে গ্রেপ্তার বন্ধ করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। চিঠিতে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে।

ছয় মানবাধিকার সংস্থার চিঠিতে বাংলাদেশে এনজিওবিষয়ক ব্যুরো সংস্কার ও বিদেশি তহবিলে নিয়ন্ত্রণ শিথিল করা, রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক প্রত্যাবাসন বন্ধ, চলাচল, জীবিকা ও শিক্ষার সুযোগ বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।

এ ছাড়া রোহিঙ্গা নিপীড়ন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে (আইসিসি) চলমান মামলায় আইসিসিকে পূর্ণ সহযোগিতা এবং আইসিসির চাহিদা অনুযায়ী ব্যক্তিদের হস্তান্তর করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।