রাজধানীজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা, বিজিবি মোতায়েন

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কাল বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত ও পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা করার কথা রয়েছে। ওইদিনই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বড়সড় গোলমালের ছক কষছেন পলাতক আওয়ামী লীগ নেতারা। ১৩ নভেম্বর আন্দোলন বা ব্লকেডের হুমকি দিচ্ছেন পলাতক আওয়ামী লীগের নেতারা।

শনিবার (৮ নভেম্বর) পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) এ এইচ এম শাহাদাত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে প্রয়োজনীয় নজরদারি ও আগাম তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা তৎপরতা আছে। অবৈধ কর্মকাণ্ড, নাশকতা বা সংঘর্ষের চেষ্টা হলে তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম খবর সংযোগকে  বলেন, প্রতিদিনই যখন ঝটিকা মিছিল করার সময় ও প্রস্তুতির সময়, ফ্যাসিবাদী লোকজনদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। পুলিশ সব সময় তৎপর আছে।

যদিও নতুন করে কিছু কথাবার্তা ফেসবুক পেজে ছড়ানো হচ্ছে, সেই পেজগুলো গোয়েন্দা নজরদারিতে নেওয়া হয়েছে। 

তিনি জানান, সব বিষয় নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। পুলিশের সব বিভাগ থেকেই বিশেষ অভিযান সব সময় চলমান থাকে। এ অভিযানের লোকজন সব সময় তৎপর থাকে।

পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, এগুলো নতুন কিছু নয়। পুলিশ সজাগ আছে ২৪ ঘণ্টা, সামনেও সজাগ থাকবে ২৪ ঘণ্টাই। দেশের কল্যাণে জনগণের নিরাপত্তা দেওয়াই পুলিশের কাজ।

দেশে থাকা সন্ত্রাসী, টোকাই, তরুণদের অর্থ দিয়ে এ কাজে লাগাতে চাচ্ছেন তারা। এ নিয়ে তারা ছকও কষে ফেলেছেন। তবে এখানেও আওয়ামী লীগ দুটো ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। একপক্ষ বলছে, ১৩ তারিখেই তারা ব্যাপক সহিংসতার মাধ্যমে ক্ষমতায় ফিরতে চায়। অন্যপক্ষ চায় গণতান্ত্রিক উপায়ে ধীরে ধীরে কাজ করতে। মানুষ যখন আওয়ামী লীগের অপকর্ম ভুলে যাবে তখন সুযোগ বুঝে তারা দেশে ফিরতে চান। কলকাতার নিউ টাউনে বসে থাকা আওয়ামী লীগের নেতা ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, তানভির হাসান মনির প্রমুখ নেতাদের সূত্রে এমনটাই খবর পাওয়া যাচ্ছে বলে পুলিশের ধারনা।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ ও দেশত্যাগ করেন। বর্তমানে তিনি ভারতে ‘আত্মগোপনে’ বা ‘পলাতক’ হিসেবে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ১৩ নভেম্বর (আগামীকাল) রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হবে । এ মামলার সহ-অভিযুক্ত হিসেবে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ আরো কয়েকজন সাবেক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাও পলাতক রয়েছেন।

রাজধানীতে বিজিবি মোতায়ন

এদিকে  ১৩ নভেম্বর ঘিরে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোর সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বুধবার (১২ নভেম্বর) সকাল থেকে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। সকালে বিজিবি সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।

বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, রাজধানীতে ১২ প্লাটুন এবং ঢাকার বাইরে আরও ২ প্লাটুনসহ মোট ১৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি বলেন, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই মোতায়েন কার্যক্রম চলবে।

রাজধানীর হাইকোর্ট এলাকা, বাংলা একাডেমি, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও স্থাপনায় সকাল থেকেই বিজিবি সদস্যদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে। একইভাবে ভোর থেকে রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও র‍্যাব সদস্য মোতায়েন রয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর ) সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘১৩ নভেম্বরকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শক্ত অবস্থানে রয়েছে। কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বরদাস্ত করা হবে না।’

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, সাম্প্রতিক অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় গোয়েন্দা সংস্থার কোনো ব্যর্থতা নেই। তিনি বলেন, ‘বড় কোনো মিছিল হচ্ছে না, কেবল কিছু জায়গায় আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এগুলো যাতে আর না ঘটে, সে জন্য সব বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

রাজধানীর মোড়ে মোড়ে তল্লাশি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির রায় ঘোষণা করা হবে বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর)। এই রায়কে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকায় ‘লকডাউন’ কর্মসূচি দিয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ।

এ কর্মসূচিকে ঘিরে রাজধানীসহ সারাদেশে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সম্ভাব্য নাশকতা প্রতিরোধে শুরু হয়েছে সাঁড়াশি অভিযান, বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি ও টহল কার্যক্রম।

বুধবার  (১২ নভেম্বর ) সকাল থেকেই রাজধানীর এয়ারপোর্ট, আব্দুল্লাহপুর, ধানমণ্ডি ৩২, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, কাকরাইল ও হাইকোর্টসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ১২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকার প্রবেশপথ ও বিভিন্ন মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি চালানো হচ্ছে, যাচাই করা হচ্ছে কাগজপত্র।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতের অভিযানে আওয়ামী লীগের ৪৪ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ডিএমপির আটটি অপরাধ বিভাগ পৃথক অভিযান চালিয়ে আরও কয়েকজনকে আটক করেছে।

রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদ আলম গণমাধ্যমকে জানান, ‘সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই আমরা হোটেল ও মেসে অভিযান চালাচ্ছি। গতরাতে কলাবাগানের একটি মেস থেকে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যারা নাশকতার পরিকল্পনায় ঢাকায় এসেছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।’

রাজধানীতে ককটেল বিস্ফোরণ 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সমানে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে, এ ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানায় পুলিশ।
‎মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার ধানমন্ডি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের গেটে এ ঘটনা ঘটে।

১৩ নভেম্বর ঘিরে খোলা জ্বালানি তেল বিক্রি বন্ধ

১৩ নভেম্বরকে সামনে রেখে কেপিআইগুলোতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘রাস্তার পাশে পরিবহণ জ্বালানি বিক্রি কয়েকদিনের জন্য বন্ধ রাখা হবে, কারণ দুর্বৃত্তরা অগ্নিসংযোগ বা অন্যান্য কাজে এসব তেল ব্যবহার বন্ধ থাকবে।

মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) সচিবালয়ে আইন-শৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে উপদেষ্টা এ কথা জানান।