জুলাই বিপ্লবের চেতনা সমুন্নত রাখার তাগিদ জামায়াত আমিরের

জুলাই বিপ্লবের চেতনা সমুন্নত রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের কাছে মুক্তিকামী সকলেই ছিলেন মজলুম। ২৪ এর গাজী ও শহিদ পরিবারগুলোর হতাশা কিছুটা দূর করতে অসম্পূর্ণ রেখেই শহীদ স্মরণিকা আজ প্রকাশিত হলো। এই স্মরণিকা পূর্ণাঙ্গ করার কাজ চলমান থাকবে। বৈষম্য, দুর্নীতি ও দুঃশাসন মুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে সকলের মধ্যে জুলাই বিপ্লবের চেতনা সমুন্নত রাখতে হবে।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে চব্বিশের রক্তস্নাত গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের তথ্য সম্বলিত ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতার শহীদ যারা’ শীর্ষক স্মারকের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

এ সময় আন্দোলনের উত্তরার একটি ঘটনা স্মরণ করে জামায়াত আমির বলেন, উত্তরার একটি ঘটনা আমি কোনোভাবে ভুলতে পারি না। ৭ থেকে ৮ বছরের একটি শিশু রাস্তায় নেমেছে। হাতে একটি ইট নিয়ে তেড়ে যাচ্ছে পুলিশের দিকে। কয়েকজন যুবক তাকে টেনে থামানোর চেষ্টা করে বলল, এই তুমি কোথায় যাও? শিশুটি বলে, 'আমি আন্দোলনে নেমেছি, আমি প্রতিরোধ করতে যাই। আমি আন্দোলন করতে এসেছি।' তখন যুবকরা তাকে জিজ্ঞেস করল তুমি কেন আন্দোলনে এসেছো? শিশুটি উত্তর দিলো, 'ওরা আমার ভাইকে খুন করেছে'। আবার প্রশ্ন করা হলো কে তোমার ভাই? শিশুটি উত্তর দিলো, 'আবু সাঈদ আমার ভাই'। তখন তাকে আবার প্রশ্ন করা হলো তোমার বাড়ি রংপুর? শিশুটি বলল আমার বাড়ি ঢাকা। তাহলে আবু সাঈ তোমার ভাই হলো কীভাবে? সে পাল্টা প্রশ্ন করে বলল, 'যে জাতির জন্য জীবন দিয়েছে সে আমার ভাই হবে না তো কী হবে?

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, 'তখন তাকে বলা হলো- তুমি চলে যাও, তোমার আন্দোলন হয়ে গেছে। আমরা আছি। তখন শিশুটি ওই যুবকদের হাত ঝাঁকি দিয়ে বলল, 'ছাড়েন আমার হাত, আপনার আন্দোলন আপনি করেন, আমার আন্দোলন আমাকে করতে দেন'। তখন বাকিরা তাকে বোঝানোর চেষ্টা করল, পুলিশ গুলি করতেছে, গুলি লাগলে তো তুমি মারা যাবে। শিশুটি উত্তর দিলো, আমি শহীদ হয়ে যাব। আজকে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বলে এসেছি যে, আমি যদি শহীদ হয়ে যাই তোমরা তোমরা আমার জন্য কেঁদো না।

জামায়াত আমির বলেন, এ ঘটনা পুরো বাংলাদেশের মানুষ জানে। এ ঘটনা প্রমাণ করে জাতি কতটা নির্যাতিত ছিল, মজলুম ছিল।

এ সময় তিনি সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলো কাছে বিনীত অনুরোধ করে বলেন, আমাদের শহীদ ভাইয়েরা বৈষম্যহীন একটা বাংলাদেশ চেয়েছিল। একটা মানবিক সুন্দর বাংলাদেশ চেয়েছিল। দুর্নীতি, দুঃশাসন মুক্ত বাংলাদেশ চেয়েছিল। তারা শহীদ হয়ে মাটির নিচে চলে গেছে। তাদের রক্তের দিকে একটু তাকান। তরতাজা সেই শিশু, কিশোর, যুবক, নারী পুষের দিকে তাকান, যারা জীবন দিয়েছে। তাদের দিকে তাকিয়ে বিপ্লবের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ এমন কোনো কাজ মেহেবানি করে কেউ করবেন না। যদি করেন শহীদদের আত্মা কষ্ট পাবে। তাদের রক্তের অপমান করা হবে। আর জীবিত শহীদ যারা পঙ্গু হয়ে আছেন, তারা ভীষণ কষ্ট পাবেন, তারা অভিশাপ দিবে। পুরো মজলুম দেশবাসী অভিশাপ দিবে।

তিনি বলেন, 'সকল অংশীদারের কাছে আমি বিনীত অনুরোধ জানাই, এমন কাজে আমরা জড়াব না যে কাজ করলে সকলের অভিশাপ আমাদের ওপর পড়বে।'