ভিন্ন এক আবহে কেটেছে এবারের পবিত্র ঈদুল ফিতর। প্রায় ১৬ বছর পর মুক্ত পরিবেশে ঈদ উদযাপন করেছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসনের দমন-পীড়নের শিকার বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দলের নেতাকর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। এর মধ্যে গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে নতুন দল ও নতুন মুখের আবির্ভাব ঘটেছে। ফলে উৎসবের আমেজ ও নব উদ্দীপনায় এবার ঈদ উদযাপন করেছে রাজনৈতিক পরিবারগুলো।
রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কার্যক্রম আবার চালাচ্ছে, যা গত বেশ কয়েকটি বছর ধরে বন্ধ ছিল। এবারের ঈদে দেশের রাজনৈতিক মহলে বেশ কিছু পরিবর্তন দেখা গেছে, এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিল— বিরোধী দলের তৎপরতা এবং ঈদের আনন্দে তাদের উপস্থিতি।
চরম কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অধিকাংশই বর্তমানে পলাতক বা আত্মগোপনে রয়েছেন। অনেক শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে মামলা চলছে, এবং তাদের কেউ কেউ কারাগারে বন্দি। ফলে, দেশের রাজনৈতিক মঞ্চে, আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দলগুলো সক্রিয় হয়েছে। বিশেষ করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের নিজ নিজ এলাকার তৃণমূল পর্যায়ে উপস্থিত হয়ে ঈদ উদ্যাপন করেছেন। তারা দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন এবং নির্বাচনী প্রচারণায় যুক্ত হয়েছেন।
ঈদের আগেই এসব দলের নেতারা তাদের এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন সামাজিক ও সেবামূলক কর্মসূচি পালন করেছেন। নির্বাচনী প্রস্তুতিতে নিয়োজিত এসব নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ জনসংযোগে নেমে পড়েছেন এবং দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সঙ্গেও যোগাযোগ স্থাপন করেছেন।
ঈদের দিন দেশের বিভিন্ন এলাকাজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ ছিল। বিভিন্ন মসজিদ ও ঈদগাহে মুসল্লিরা ঈদের নামাজে অংশ নিয়েছেন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারাও সেখানে উপস্থিত হয়ে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এছাড়া, রাজনৈতিক দলের নেতারা নিজেদের নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন এবং দলীয় কর্মসূচি পালন করেছেন।
যেহেতু ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে যেকোনো সময় নির্বাচন হতে পারে, সব রাজনৈতিক দলই নির্বাচন প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে। ইতিমধ্যে দলের প্রার্থীরা বিভিন্ন আসনে প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন এবং তারা নির্বাচনী প্রচারণায় যোগ দিয়েছেন। ঈদুল ফিতর ছিল এসব প্রচারণার অংশ হিসেবে একটি বড় সুযোগ, যেখানে তারা স্থানীয় নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন।
এদিকে, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘ আট বছর পর এবার নিজের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করেছেন, তিনি ঈদের দিন লন্ডনে নিজের পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান। সেখানে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করে মানসিকভাবে চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। তিনি দলের নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন এবং দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজ নির্বাচনী এলাকা ঠাকুরগাঁওয়ে অবস্থান করেছেন এবং সেখানে দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।
এদিকে, জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান ঈদের দিন শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করেছেন। তিনি জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদের নামাজ আদায় করেন এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। তিনি ঈদের পর মৌলভীবাজার সফর করেছেন, এবং দলের অন্যান্য নেতারা তাদের নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। জামায়াতের অন্য শীর্ষ নেতারাও নির্বাচনী জনসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ঈদ উপলক্ষে ঢাকা শহরে অবস্থান করেছেন এবং জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ পড়েন। তিনি শহীদদের স্মরণে জুরাইন কবরস্থানে গিয়েছিলেন। দলের অন্য নেতারাও তাদের নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করে ঈদ উদ্যাপন করেছেন এবং সেখানকার রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।
এছাড়া, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণতন্ত্র মঞ্চ, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের নিজ নিজ এলাকায় ঈদ উদ্যাপন করেছেন। এসব দলের নেতারা ঈদ উপলক্ষে স্থানীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন এবং বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।