এমন একটা বাংলাদেশ চাই, যে দেশে আমরা নিজেরা চাঁদাবাজি করবো না এবং কাউকে চাঁদাবাজি করতে দেবো না। যে বাংলাদেশে কেউ ঘুষ নেবে না, ঘুষের জন্য যে হাত বাড়াবে, তার হাত অবশ করে দেওয়া হবে। এই বাংলাদেশটাই চাই। ভিক্ষুকের মানসিকতা নিয়ে রাজনীতিতে আসবেন না। লুটেরার মানসিকতা নিয়ে আসবেন না। চোরের মানসিকতা নিয়ে আসবেন না। রাজপথের মানসিকতা নিয়ে আসবেন। মানুষকে ভালোবাসার, সম্মান করার, মানুষের সম্পদ, ইজ্জত ও জীবনের পাহারাদারি করার মানসিকতা নিয়ে আসবেন। যারা এটা পারবেন, তারা রাজনীতিতে আসেন।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিকেলে রংপুর সদরের মমিনপুরে জামায়াতের প্রবীণ রোকন শাহ আলমের কবর জিয়ারত ও পরিবারের সদস্যদের সাথে সাক্ষাত শেষে অনুষ্ঠিত সভায় নেতাদের উদ্দেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন এ সব মন্তব্য করেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যারা পারবেন না, মানুষের পকেট থেকে টাকা চুরি করে, লুণ্ঠন করে, দেশে-বিদেশে সম্পদের পাহাড় যারা গড়ে তুলবেন; তাদের আমি অনুরোধ করবো, এর চেয়ে ভিক্ষা অনেক ভালো, সেটা করুন। এভাবে মানুষের পকেট কাটবেন না, চাঁদাবাজি করবেন না। চাঁদাবাজি জঘন্য অপরাধ।
দেশ যেভাবে চলছে, তাতে জনগণ সন্তুষ্ট নয় দাবি করে জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, দেশটা যেভাবে চলে এসেছে, এর ওপর বাংলাদেশের আপামর জনগণ সন্তুষ্ট নয়। ক্ষুব্ধ, অসন্তুষ্ট। এই ক্ষোভের আগুন মেটানো আল্লাহ তাআলার পক্ষেই সম্ভব। কিন্তু জমিনে আমাদের চেষ্টা করতে হবে। সেই চেষ্টার গুরুত্বপূর্ণ একটি ছিল ১৯ জুলাইয়ের জাতীয় সমাবেশ।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছর, পালাক্রমে আমরা অনেককে দেশ শাসন করতে দেখেছি। তারা তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাদের চেষ্টার সাক্ষী এ দেশের ১৮ কোটি মানুষ। তারা ভালো করলেও সেটার সাক্ষী, মন্দ করলেও সেটার সাক্ষী।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জাতি ও বিশ্ববাসীকে সাক্ষী রেখে বলেছি, জামায়াত ইসলামী থেকে আগামী দিনে মহান মাবুদের ইচ্ছায়, আপনাদের ভালোবাসা ও সমর্থনে যারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন, যদি সরকার গঠনের সুযোগ পাই, আল্লাহ ভালো জানেন, তাহলে যারা মন্ত্রী হবেন, আগামী দিনে আমাদের সংগঠনের কেউ সরকারি কোনো প্লট নেবে না, বিনা ট্যাক্সের গাড়িতে চড়বে না।
এক দেশে দুই আইন চলবে না জানিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, ‘আগে ঘর সামলাই, তারপর বাইরও সামলাবো ইনশা আল্লাহ। এক দেশে দুই আইন চলবে না। আমরা যখন নেবো না, কাউকে নিতেও দেবো না। গর্জন করবো সংসদের ভেতরে, রাজপথে, গর্জন করবো আপনাদের সঙ্গে নিয়ে।
ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পারস্পারিক শ্রদ্ধা ও সমতার ভিত্তিতে ভারতের সাথে সম্পর্কে রেখে চলবে বাংলাদেশ। ভারত স্বাধীন দেশ হিসেবে আমরা সম্মান করি। বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে সম্মান করতে হবে। কারো চাপাচাপিতে দেশের সম্পদ (লালমনিরহাট বিমান ঘাঁটি) ব্যবহারে কোন বাঁধা মানা হবে না। আমরা এই না মানার কারণে অনেক মূল্য দিয়েছি। প্রয়োজনে আগামীতে আরও দিবো। কিন্তু জাতির ইজ্জত কারও কাছে বন্দক রাখবো না।
জামায়াতের আমির বলেন, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হলো দেশে ফ্যাসিবাদ, কালো টাকার খেলা, মাসেল-মাস্তানীতন্ত্র বন্ধ হবে। কোয়ালিটি সংসদের জন্য আমরা লড়াই করছি। দলীয় স্বার্থের উর্ধ্বে থেকে জনগণের কি সুবিধা হবে সেই আইন তৈরি করতে হবে। দেশের ১৭৪টি দেশের মধ্যে ৯১টি সভ্য দেশে এটি রয়েছে। আমাদের দেশেও এটি চাই।
জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, জাত, পাত, ধর্ম, বর্ন নির্বিশেষে এই রাষ্ট্রে সকল নাগরিকের সমান অধিকার রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী দেশের সকল নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করা হবে। আমাদের সমাজের চারদিক কালো পর্দা ঘিরে রেখেছে। আমাদের সেই কালো পর্দাকে ছিড়ে খান খান করতে হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য মাহবুবার রহমান বেলাল, জেলা আমির গোলাম রব্বানী, মহানগর আমির আজম খানসহ অন্যরা। এর আগে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা থেকে রংপুরে এসে জামায়াতের আমির ডাঃ শফিকুর রহমান সমাবেশে অংশ নেন।