ভিডিও বার্তা

জনগণের জন্য শত মামলা মাথায় নিতে রাজি: নিক্সন চৌধুরী

বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, অসহায় খেটে খাওয়া মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার ঘটনা দুঃখজনক। কিন্তু পুলিশ সেটাই করছে। আমি নাশকতার ঘটনার পক্ষে নই। কিন্তু জনগণের দাবি দুটি ইউনিয়ন তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার পক্ষে আন্দোলন কর্মসূচির সাথে আছি।

শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নিক্সন চৌধুরীর পক্ষে আশীকুজ জামানের ফেসবুক পোস্ট থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সেখান থেকে আওয়ামী পন্থী নেতাকর্মী এবং নিক্সন চৌধুরীর আস্থাভাজন অনেকে পোস্টটি শেয়ার দেওয়ায় জনসম্মুখে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।

সাত মিনিট ২২ সেকেন্ডের ভিডিও বার্তা সূত্রে জানা গেছে, নিক্সন চৌধুরী বলেন, আমি সংবাদপত্র ও নেতাকর্মীদের কাছ থেকে জানতে পারলাম ভাঙ্গার জনগণের ন্যায্য দাবির আন্দোলনে অবৈধ সরকার ও পুলিশ এক নম্বর আসামি করে আমার বিরুদ্ধে মামলায় দায়ের করেছে। আমার পাশাপাশি খেটে খাওয়া মানুষকেও এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। আমি বলবো, যারা আন্দোলন কর্মসূচি করছেন, তারা নিজেদের দীর্ঘদিনের পরিচয়ের অধিকার আদায়ে মাঠে নেমেছেন। শুধু একজন ব্যক্তিকে বিজয় করতে অবৈধ সরকার ও নির্বাচন কমিশন দুটি ইউনিয়নকে কেটে নিয়ে গেছে। যেখানে হাজার হাজার মানুষ বসবাস করেন। এ দুটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত এলাকা এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ধারকবাহক। তারা শেখ হাসিনাকে ভোট দিয়ে থাকে, এটাই তাদের অন্যায়। এ কারণে ভাঙ্গা উপজেলা থেকে কেটে নিয়ে পার্শ্ববর্তী সালথা উপজেলায় কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যাতে নৌকার ভোট কমে যায়।

ভিডিও বার্তা নিক্সন চৌধুরী আরও বলেন, জনগণের মনে কষ্ট দিয়ে নির্বাচন করতে চাইছেন। আবার ষড়যন্ত্র করে সেই আপনারা রাস্তায় নামছেন। ভাঙ্গার জনগণ ও দেশের জনগণ বোকা নয়, সত্যিকারে আপনারাই বোকা। আমি একটা বিবৃতি দিয়েছিলাম, আমি এ উপজেলা থেকে ৩ বার জনগণের ভোটের এমপি ছিলাম। ভালোবেসে আমাকে ভোট দিয়েছিলেন তারা। আমি আন্দোলনের ও জনগণের সঙ্গে আছি বলে বিবৃতিতে দিয়ে ছিলাম বলেই এক নম্বর আসামি করা হয়েছে।

আমি অবৈধ সরকার কারণে বিদেশে আছি উল্লেখ করে নিক্সন চৌধুরী বলেন, ঠিক আছে আমাকে আসামি করা হয়েছে, আমি ভয় বা বিচলিত নয়। ভাঙ্গার জনগণের জন্য আমি এরকম ১০০ মামলা খেলেও ভয় পাই না। কিন্তু নিরীহ অসহায় মানুষকে হয়রানি-জুলুম-অত্যাচার-নির্যাতন করবেন না। জনগণের ন্যায্য দাবি ইউনিয়ন দুটি অসহায় মানুষগুলোর কথা চিন্তা করে ফেরত দিন। শুধু একজন বা একটা দলকে টার্গেট করে বিজয়ের জন্য আওয়ামী লীগের ভোট কেটে নেবেন, এজন্য জনগণ আন্দোলনে নেমেছেন। তারা ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছেন। এটা আমি মোটেই সমথর্ন করি না। আমি আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সরকারের কাছ থেকে চেয়ে এনে এসব কিছু জনগণের জন্য করেছিলাম। উপজেলা পরিষদের নতুন চারতলা ভবন ও অডিটোরিয়াম আমি নিক্সন চৌধুরী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন ফান্ড থেকে এনেছিলাম।

তিনি মোটেও ভাঙচুরের পক্ষে নয় বলে জানিয়ে নিক্সন চৌধুরী বলেন, কেন জনগণকে এমন পরিস্থিতিতে আসতে হচ্ছে। একটি দল ও ব্যক্তি বিশেষকে বিজয় করাতে জনগণের উপর জুলুম-নির্যাতন করা হচ্ছে।

সারাদেশের জনগণ কোনভাবেই ভালো মনে করছেন না বলে অভিমত প্রকাশ করে নিক্সন চৌধুরী পরিশেষে আরও বলেছেন, জনগণ কিন্তু নাটক বুঝতে পারে। ডিসি সাহেব নির্বাচন কমিশনে চিঠি দেবেন, আরেকজন আপিল করবেন এসব করে কোন লাভ হবে না। আমরা চাই আমাদের দুটি ইউনিয়ন পরিষদ ফেরত। তা না হলে আমার আন্দোলন নয়, জনগণের আন্দোলন চলছে এবং চলবে বলে হুমকি দেন নিক্সন চৌধুরী।

ভিডিও বার্তার শেষ অংশে নিক্সন চৌধুরী ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ইউনিয়ন পরিষদের আটক চেয়ারম্যানের মুক্তির দাবি জানিয়ে বলেন, পুলিশ মারা গেলে এ অবৈধ সরকার মামলা করে না। বিগত ২৪ সালে জঙ্গিরা পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। সরকার কিন্তু মামলা করেনি।

কোন পুলিশ পরিবার হত্যার বিচার পায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পুলিশ চলে। জনগণকে পুলিশ নিরাপত্তা দেয় বলে আমরা নিরাপদে চলাচল করতে পারে। কিন্তু পুলিশ হত্যার বিচার না হলেও পুলিশকে দিয়ে সরকার তার কাজ হাসিল করে থাকেন। অতএব পুলিশকে বুঝতে হবে কাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন। ভাঙ্গার জনগণের জন্য একটা কেন এইরকম ১০০ মামলা মাথায় নিতে আমি নিক্সন চৌধুরী রাজী। কেউ আমাকে ভুল বুঝবেন না। যতদূর এবং যেখানে থাকি না কেন আপনাদের সাথে আছি। আপনাদের দাবি আদায়ের সাথে আছি।

জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু, জয় হোক শেখ হাসিনা বলে ৭ মিনিট ২২ সেকেন্ড ভিডিও বার্তা শেষ করেন শেখ হাসিনার ভাতিজা মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন।

নিক্সন চৌধুরীর ভিডিও বার্তা প্রকাশ প্রসঙ্গে উপজেলা বিএনপি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজি না হলেও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আয়ূব মুন্সী বলেছেন, আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপি নেতাকর্মীরাও মামলার আসামি হয়েছেন। অতএব সাবেক সংসদ সদস্য রাজনৈতিক বক্তব্য রেখেছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ভিডিও বার্তার বিষয়ে তারা লোকমুখে জানতে পারেন। বিষয়টি নজরে আসলে তা খতিয়ে দেখবে পুলিশ। এছাড়া সাবেক সংসদ সদস্যের উস্কানিমূলক একটি বক্তব্যের ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশ থেকে একটা প্রতিবাদমূলক বিবৃতিতে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে থানা সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা।

উল্লেখ্য, ভাঙ্গার দুটি ইউনিয়ন আলগী ও হামিরদীকে গত ৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন থেকে পার্শ্ববর্তী উপজেলা নগরকান্দা উপজেলার সাথে সংযুক্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। ভাঙ্গার সাথে পুনরায় সংযুক্ত করতে জনগণের আন্দোলন কর্মসূচিতে নিক্সন চৌধুরী নিজের সমর্থন ও একাত্মতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে আগেও একটি ভিডিও পোস্ট করেন।

ভিডিও বার্তার পর জনগণের সামাজিক আন্দোলন কর্মসূচিটি রাজনৈতিক প্রভাব সৃষ্ট করে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে ৩টি রাষ্ট্রীয় সম্পদে আগুন, ভাঙচুর ও মালামাল লুটপাটের পাশাপাশি ভষ্মীভূত করা হয় প্রায় কয়েক কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ।