মা— শব্দে জড়িয়ে আছে ভালোবাসা, আত্মত্যাগ, কষ্ট আর অফুরন্ত মমতা। ইসলামে মা-বাবার প্রতি সদ্ব্যবহার শুধু সামাজিক দায়িত্ব নয়, ইবাদতের অংশ। কুরআন ও হাদিসে মায়ের মর্যাদা, তার দোয়া এবং বদদোয়ার বিষয়ে রয়েছে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা।
মায়ের দোয়া: জান্নাতের পথে সেতু
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা'আলা কুরআনে বলেছেন— ‘আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতে নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টসহকারে গর্ভে ধারণ করেছে।’ (সূরা আহকাফ: ১৫)
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আশীর্বাদগুলোর একটি মায়ের অন্তরের দোয়া। রাসূল (সা.) বলেছেন—তিন ব্যক্তির দোয়া ফেরত যায় না—প্রকৃত রোজাদারের দোয়া, ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া এবং মজলুম ব্যক্তির দোয়া। (তিরমিজি: ৩৫৯৮)
ইমাম গাজ্জালি (রহ.) বলেন, ‘মায়ের মুখ থেকে নিঃসৃত দোয়া সন্তানকে এমন সুফল দিতে পারে, যা কোনো ওলির মোনাজাতেও মিলবে না।’
মায়ের বদদোয়া: অদৃশ্য বিপর্যয়ের কারণ
ইসলামে কাউকে কষ্ট না দেওয়ার ওপর বড় জোর দেওয়া হয়েছে। আর মা যদি সন্তানের কোনো আচরণে কষ্ট পেয়ে বদদোয়া করেন, তবে তা হতে পারে সন্তান জীবনের চরম ক্ষতির কারণ।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—‘তোমরা নিজেরা নিজেদের বিরুদ্ধে, সন্তানদের বিরুদ্ধে এবং ধন-সম্পদের বিরুদ্ধে বদদোয়া করো না, এমন সময় যেন তা না হয় যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে দোয়া কবুল হয়ে থাকে।’ (সহিহ মুসলিম: ৩০১৪)
অর্থাৎ রাগের বশে মা যদি বলে ফেলেন— ‘তুই কপালে সুখ দেখবি না’, সেই মুহূর্তে আল্লাহ যদি তা কবুল করে নেন, তাহলে সন্তান দীর্ঘ সময় দুর্ভোগে থাকতে পারে।
সন্তানের করণীয় কী?
ইসলাম সন্তানকে বারবার উপদেশ দেয় মায়ের সঙ্গে বিনয়ী ও শ্রদ্ধাশীল হতে।
তাদের (মা-বাবার) সামনে উঁচু স্বরে কথা বলো না, ধমক দিয়ো না, তাদের সঙ্গে নম্র ভাষায় কথা বলো। (সুরা ইসরা: ২৩)
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমার মায়ের সেবা করো, কারণ জান্নাত তার পায়ের নিচে।’ (নাসাঈ: ৩১০৪)
সন্তানের উচিত মাকে খুশি রাখা, তার প্রয়োজনগুলো বুঝে এগিয়ে আসা এবং তার কাছে দোয়া চাওয়া।
মায়েরও দায়িত্ব আছে
ইসলাম মা-বাবাকে সংযমের শিক্ষা দেয়। বদদোয়া করা ইসলাম পছন্দ করে না। বরং ধৈর্য ধরার কথা বলে। রাগের সময় নীরব থাকা, সন্তানের জন্য গাইড ও সহানুভূতিশীল হওয়াই একজন আদর্শ মায়ের গুণ।