বান্দার হক বিনষ্টকারীর ইবাদত কবুল হবে কি?

বান্দার হক বিনষ্টকারীগণ ক্বিয়ামতের দিন সর্বাধিক অসহায় ও নিঃস্ব হিসাবে গণ্য হবে। তাদের সালাত, সিয়াম, যাকাত, হজ ও অন্যান্য ইবাদত কবুল হবে। তবে তার ইবাদতগুলোর সওয়াব যেসব মানুষের অধিকার নষ্ট করেছে তাদেরকে দিয়ে দেওয়া হবে। একজন মুমিন সব সময় অন্যের উপকারের চেষ্টা করবে এবং ক্ষতিসাধন থেকে দূরে থাকবে- এটাই ইসলামের শিক্ষা।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের ওপর যুলুম করেছে সে যেন তা থেকে আজই মাফ চেয়ে নেয়, তার ভাইয়ের জন্য তার কাছ থেকে নেকী কর্তন করে নেওয়ার পূর্বে। কেননা সেখানে (হাশরের ময়দানে) কোন দীনার বা দেরহাম পাওয়া যাবে না। তার কাছে যদি নেকী না থাকে তবে তার (মযলূম) ভাইয়ের গোনাহ এনে তার উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে (বুখারী হা/৬৫৩৪)। 

রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে নিঃস্ব সেই ব্যক্তি, যে দুনিয়া থেকে সালাত-সিয়াম, যাকাত ইত্যাদি আদায় করে আসবে। সাথে ঐসব লোকেরাও আসবে, যাদের কাউকে সে গালি দিয়েছে, কারোর উপরে অপবাদ দিয়েছে, অন্যের মাল/সম্পদ গ্রাস করেছে, কাউকে হত্যা করেছে বা কাউকে প্রহার করেছে। তখন ঐসব পাওনাদারকে ওই ব্যক্তির নেকী থেকে পরিশোধ করা হবে। এভাবে পরিশোধ করতে করতে যদি তার নেকী শেষ হয়ে যায়, তখন ঐসব লোকদের পাপসমূহ এই ব্যক্তির উপর চাপানো হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে’ (মুসলিম হা/২৫৮১; মিশকাত হা/৫১২৭)।

জাবের (রা.) বলেন, আমি নবী করীম (সা.)-কে বলতে শুনেছি, কোনো জান্নাতবাসী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ তার উপর কোন জাহান্নামবাসীর দাবী অবশিষ্ট থাকবে। আর কোন জাহান্নামবাসীও জাহান্নামে প্রবেশ করবে না যতক্ষণ তার উপর কোন জান্নাতবাসীর দাবি অবশিষ্ট থাকবে। আমি বললাম, সে দাবী কিভাবে মিটমাট করবে, যেখানে আমরা সকলে উত্থিত হব আল্লাহর সমীপে সহায়-সম্বলহীনভাবে? 

জবাবে নবী করীম (সা.) বলেন, নেকী ও গোনাহ দ্বারা হক দারের পাওনা পরিশোধ করা হবে’ (আহমাদ হা/১৬০৪২; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৯৭০; ছহীহুত তারগীব হা/৩৬০৮)।

এ হাদিস দ্বারা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করা যায়, দুনিয়াতে মানুষে মানুষে শুধু নয় সকল মাখলুকাতের মাঝে বিদ্যমান অন্যায়, বৈষম্য ও বে-ইনসাফির হিসেব আখেরাতের আদালতে হবে। কেউ কারও হক নষ্ট করে দুনিয়াতে পার পেয়ে গেলেও আখেরাতে তাকে অবশ্যই পাকড়াও করা হবে এবং সে হক আদায় করা হবে।