আরাফা আরবি শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে চেনা, জানা। দীর্ঘদিন বিচ্ছেদের পর হযরত আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) পরস্পরের দেখা হয়- আরাফাতের দিন। এটি তওবা করার দিবস, ক্ষমা প্রার্থনা করার দিবস। আরাফার দিন শুধু হাজীদের জন্য নয়, সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের দিন। এই দিনে আল্লাহ তাআলা তাঁর অসংখ্য বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন।
আরাফাতের ময়দান বিচার দিবসের হাশরের ময়দানের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়; যেখানে সমগ্র মানবজাতি একত্রিত হবে সুবিস্তৃত এক ময়দানে। এ দিবসে মহান আল্লাহ তার ক্ষমা, রহমত ও দয়া উপস্থাপন করেন।
হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘আমি আশাবাদী যে, আরাফার দিনের রোযা বিগত এক বছর ও আগত এক বছরের গুনাহ মাফ করে দিবে।’
এ দিন দোয়া কবুল হওয়ার এক মহাসুযোগ। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘শ্রেষ্ঠ দোয়া হলো আরাফার দিনের দোয়া।’
এবং রাসূল (সা.) নিজে ও পূর্ববর্তী নবীদের পড়া সর্বোত্তম দোয়াটি হলো:
خَيْرُ الدُّعَاءِ دُعَاءُ يَوْمِ عَرَفَةَ وَخَيْرُ مَا قُلْتُ أَنَا وَالنَّبِيُّوْنَ مِنْ قَبْلِى لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيْرٌ
উচ্চারণ: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ও হুয়া আলা কুল্লি শাই’ইন কাদির।’
অর্থ: সবচেয়ে উত্তম দোয়া হলো আরাফা দিবসের দোয়া। আর সর্বশ্রেষ্ঠ কথা যা আমি বলি ও আমার পূর্ববর্তী নবীগণ বলেছেন তা হলো- আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, রাজত্ব তাঁরই, সকল প্রশংসা তাঁরই প্রাপ্য এবং তিনি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান। (তিরমিজি, হাদিস: ২৮৩৭; মিশকাত, হাদিস: ২৫৯৮)
আরাফার দিন সম্পর্কে আরও এক অনন্য হাদিসে এসেছে, এই দিনে আল্লাহ দুনিয়ার সবচেয়ে নিকটবর্তী হন, আর বান্দাদের নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করে বলেন- ‘দেখো আমার বান্দারা ধূলিধূসরিত হয়ে দূর-দূরান্ত থেকে এসেছে, তারা আমার রহমতের আশায় এসেছে, অথচ আমার আযাব দেখেনি।’
মুসলিম বিশ্বের জন্য আরাফার দিন এক অফুরন্ত রহমতের বারতা নিয়ে আসে-হোক সে হজ পালনে আরাফাতে উপস্থিত, কিংবা নিজ ঘরে বসে রোজা, দোয়া ও ইবাদতে লিপ্ত। এই দিনটি তাই শুধু স্মরণীয় নয়, বরং আত্মশুদ্ধি, তওবা ও আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়ার এক বিরল সুযোগ।