নারীর জানাজার নামাজ আর পুরুষের জানাজার নামাজের নিয়ত, নিয়ম ও দোয়ায় তেমন পার্থক্য নেই। প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষের জানাজার নামাজে একই দোয়া পড়তে হয়। অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে ও ছেলের জানাজার দোয়াও একই। এখানে নারীর জানাজার নামাজের নিয়ত, নিয়ম ও দোয়া ধারাবাহিকভাবে বিস্তারিত খবর সংযোগের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
নারীর জানাজার নামাজে দাঁড়িয়ে প্রথমেই নিয়ত করুন। মনে মনে বা মুখে উচ্চারণ করে বলুন, ‘আমি সামনে উপস্থিত হওয়া মৃতের জানাজার নামাজ এই ইমামের ইমামতিতে আদায় করছি’। তারপর ইমামের সঙ্গে ‘আল্লাহ আকবার’ বলে কান পর্যন্ত দুই হাত ওঠান, অন্যান্য নামাজের মতো হাত বাধতে হবে। প্রথম তাকবিরের পর সানা পড়ুন:
سُبْحَانَكَ اَللَّهُمَّ وَ بِحَمْدِكَ وَ تَبَارَكَ اسْمُكَ وَ تَعَالِىْ جَدُّكَ وَ لَا اِلَهَ غَيْرُكَ
উচ্চারণ: সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারাকাসমুকা, ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আপনার নাম অতি বরকতময়। আপনি সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারী এবং আপনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই।
তারপর ইমাম দ্বিতীয় তাকবির বললে হাত ওঠানো ছাড়াই দ্বিতীয় তাকবির বলুন। দ্বিতীয় তাকবিরের পর দরুদ পড়ুন:
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম ইন্নাকা হামিদুম-মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ কামা বারাকতা আলা ইবরাহিম ওয়া আলা আলি ইবরাহিম ইন্নাকা হামিদুম-মাজিদ।
অর্থ: হে আল্লাহ! উম্মি নবি মুহাম্মাদের ওপর এবং মুহাম্মাদের পরিবারের ওপর রহমত বর্ষণ করুন, যেমন রহমত বর্ষণ করেছেন ইবরাহিমের ওপর এবং ইবরাহিমের পরিবারের ওপর। উম্মি নবি মুহাম্মাদ ও তার পরিবারকে বরকত দান করুন, যেমন ইবরাহিম ও তার পরিবারকে বরকত দান করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত, মহিমান্বিত।
তারপর ইমাম তৃতীয় তাকবির বললে হাত ওঠানো ছাড়াই তৃতীয় তাকবির বলুন। তৃতীয় তাকবিরের পর প্রাপ্তবয়স্ক নারীর জানাজায় এ দোয়া পড়ুন:
اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِ نَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيْرِنَا وَكَبِيْرِنَا وَذَكَرِنَا وَاُنْثَنَا اَللّٰهُمَّ مَنْ اَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَاَحْيِهِ عَلٰى الْاِسْلاَمِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلٰى الْاِيْمَانِ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা-গফিরলি হায়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়িবিনা ওয়া সাগীরিনা ওয়া কাবীরিনা ওয়া যাকারিনা ওয়া উনছানা। আল্লাহুম্মা মান আহইয়াহতাহু মিন্না ফাআহয়িহী আলাল ইসলামি ওয়া মান তাওয়াফ ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফফাহ আলাল ইমান।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের জীবিত ও মৃত উপস্থিত ও অনুপস্থিত, ছোট ও বড় এবং পুরুষ ও নারী সবাইকে ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ আপনি আমাদের মধ্য থেকে যাদের জীবিত রেখেছেন ইসলামের ওপর জীবিত রাখেন আর যাদের মৃত্যুদান করেছেন তাদের ইমানের সঙ্গেই মৃত্যুদান করুন।
অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের জানাজার নামাজে তৃতীয় তাকবিরের পর এ দোয়া পড়ুন:
اَللّٰهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرْطًا وَّاجْعَلْهُ لَنَا اَجْرًا وَّذُخْرًا وَّاجْعَلْهُ لَنَا شَافِعًا وَّمُشَفَّعًا
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা-জআলহু লানা ফারতাও ওয়া-জআলহু লানা আজরাও ওয়া যুখরাও ওয়া-জআলহু লানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ্ফাআন।
অর্থ: হে আল্লাহ! তাকে আমাদের অগ্রবর্তী ব্যবস্থাপক (কোনো সফরে যে আগে আগে চলে এবং পেছনের লোকেরা পরে তার সাথে মিলিত হয়) বানিয়ে দিন, তাকে আমাদের জন্য সঞ্চয় ও সওয়াবের উপকরণ বানিয়ে দিন এবং তাকে আমাদের জন্য সুপারিশকারী ও গ্রহণযোগ্য সুপারিশকারী বানান।
তারপর ইমাম চতুর্থ তাকবির বললে হাত ওঠানো ছাড়াই চতুর্থ তাকবির বলুন। চতুর্থ তাকবিরের পর ইমামের সঙ্গে সালাম ফেরান।
জানাজার নামাজে শুধু প্রথম তাকবির বলার সময় হাত ওঠবেন, বাকি তাকবিরগুলোতে হাত ওঠাবেন না যেমন ওপরে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথম তাকবিরের পর অন্যান্য নামাজের মতো নাভির ওপর হাত বেঁধে রাখবেন।
জানাজা শেষে কখন হাত ছাড়তে হবে এ বিষয়ে আলেমদের দুটি মত পাওয়া যায়। অনেকে বলেছেন, চতুর্থ তাকবিরের পর উভয় হাত ছেড়ে দিতে হবে। আরেকটি মত হলো, উভয় দিকে সালাম ফেরানোর পর হাত ছাড়তে হবে। দুইটি মতই শুদ্ধ, যে কোনোটির ওপর আমল করা যায়।
জান্নাত লাভের সহজ আমল