ঈদুল আজহার নির্ধারিত দিনের পরেও নির্দিষ্ট কয়েকদিনব্যাপী কোরবানি করা জায়েজ। সেটি কি তিন দিন নাকি চার দিন? এই প্রতিবেদনে দলিলসহ তুলে ধরা হলো কোরবানির সঠিক সময় কতদিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
কোরবানির সময়কাল
কোরবানির সময়কাল হলো জিলহজের ১০ তারিখ থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত। এই তিন দিনের যেকোনো দিন কোরবানি করা জায়েজ। তবে প্রথম দিন কোরবানি করা উত্তম। তারপর দ্বিতীয় দিন। তারপর তৃতীয় দিন। জিলহজ মাসের ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পর কোরবানি করা শুদ্ধ নয়। (ফতোয়ায়ে আলমগিরি : ৫/২৯৬)
আর ঈদুল আজহার নামাজের আগে কোরবানি করা বৈধ নয়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আজ আমরা এই দিনে প্রথমে নামাজ আদায় করি, তারপর কোরবানি করি। যে ব্যক্তি এমনটি করে, সে আমাদের সুন্নাতের অনুসরণ করল।’ (সহিহ বুখারি: ৫৫৪৫)
কোরবানির সময় ৩ দিন নাকি ৪ চারদিন?
রাসুল (স.) বলেন- তোমাদের মধ্যে যারা কোরবানি করবে, তারা যেন তৃতীয় দিন সকাল হওয়ার পর পর্যন্ত কোরবানির মাংস ঘরে রেখে না দেয়।’ (সহিহ বুখারি: ৫৫৬৯) এই হাদিস অনুযায়ী ‘তৃতীয় দিন’ পর্যন্ত কোরবানির মাংস সংরক্ষণে একসময় নিষেধাজ্ঞা ছিল। পরে সে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। এই হাদিস প্রমাণ করে, কোরবানির সময়সীমা তিন দিন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। কারণ তার বেশি হলে গোশত রাখার সময়ও বাড়ানো হতো।
‘চার দিন’ মতটি কেন দুর্বল?
জুবাইর ইবনে মুতইম (রা.) সূত্রে একটি বর্ণনা রয়েছে। যেটা বলছে কোরবানি চার দিন। এই হাদিসের সনদ মুনকাতি (বিচ্ছিন্ন), অর্থাৎ রাবিদের মাঝে ধারাবাহিকতা নেই। হাদিস শাস্ত্রে মুনকাতি হাদিস গ্রহণযোগ্য নয়, বিশেষত যখন সহিহ ও মুতাওয়াতির হাদিসের বিপরীতে হয়।
উপরন্তু, এই হাদিসের আলোচিত অংশ অন্যান্য শক্তিশালী সূত্রে পাওয়া যায় না, অর্থাৎ এটি ‘শায’ (বিচ্যুত) হিসেবে চিহ্নিত। মূল হাদিসগুলো কোরবানি ৩ দিনের সীমা নির্ধারণ করে। হজরত ওমর, আলী, ইবনে ওমর, আব্বাস, আবু হুরায়রা (রা.) সকলেই বলেন- ‘কোরবানি তিন দিন, তার বেশি নয়’ এ ধরনের আমলকে হাদিসের পরিভাষায় বলে ‘মারফু হুকমি’, যা রাসুল (স.) থেকেই গ্রহণ করা হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়।
ইমাম জাসসাস স্পষ্ট বলেন, ‘তিন দিনের ওপর ইজমা (ঐকমত্য) এবং সুন্নাহ প্রতিষ্ঠিত, তাই এর বাইরে কিছু গ্রহণযোগ্য নয়।’ (শরহু মুখতাসারিত তাহাবি: ৭/৩৩৩)
যারা চার দিনের মত বলেছেন—আতা ইবনে আবি রাবাহ, হাসান বসরি, ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ (রহ.)—তাঁরা সাহাবি নন; তাঁদের মত ইজতিহাদি, দলিলভিত্তিক সর্বসম্মত নয়। ইমাম শাফেয়ি (রহ.) এই মত গ্রহণ করলেও তাঁরা কেউ তিন দিনের মতকে ‘ভিত্তিহীন’ বলেননি। বরং উভয় দিকেই কিছু দলিল থাকায় একে ফিকহি মতভেদ বলা হয়, তবে তিন দিনের মত অধিকতর সহিহ ও শক্তিশালী।
কোরবানি যথাসময়ে না দিলে করণীয়
ওয়াজিব কোরবানি যথাসময়ে (৩ দিনের মধ্যে) দিতে না পারা ব্যক্তি কোরবানির পশু ক্রয় না করে থাকলে তার ওপর কোরবানির উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। আর যদি পশু ক্রয় করেছিল, কিন্তু কোনো কারণে কোরবানি দেওয়া হয়নি তাহলে ওই পশু জীবিত সদকা করে দিতে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২০৪; ফতোয়ায়ে কাজিখান: ৩/৩৪৫)
যদি (সময়ের পরে) জবাই করে ফেলে তাহলে পুরো গোশত সদকা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে গোশতের মূল্য যদি জীবিত পশুর চেয়ে কমে যায় তাহলে যে পরিমাণ মূল্য হ্রাস পেল তা-ও সদকা করতে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২০২; আদ্দুররুল মুখতার; ৬/৩২০-৩২১)