আজ পবিত্র আখেরি চাহার সোম্বা

আখেরি চাহার সোম্বা ভারতীয় উপমহাদেশ ও ইরানসহ মুসলিম অধ্যুষিত বিভিন্ন অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় দিবস। শব্দযুগলটি আরবি ও ফারসি থেকে উদ্ভুত। আরবি শব্দ 'আখেরি' অর্থ শেষ এবং ফারসি শব্দ 'চাহার সোম্বা' অর্থ বুধবার। ফলে এর অর্থ দাঁড়ায় সফর মাসের শেষ বুধবার। দিনটিকে মুসলমানরা খুশির দিন হিসেবে চেনে এবং ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালন করে থাকে।

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ই মুসলিম উম্মাহর জন্য আদর্শ। তবে মক্কায় ১৩ বছর নবুওয়াতের সময় তিনি কোরাইশ কাফেরদের নির্যাতন সহ্য করেছেন। হিজরতের পর মদিনায় আসলেও ইহুদি ও মুনাফিকদের ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। নানা যুদ্ধ, অপপ্রচার ও প্রাণনাশের ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও তারা ইসলামকে দমাতে ব্যর্থ হয়।

ইতিহাসে বর্ণিত আছে, যখন রাসুলুল্লাহ (সা.) অসুস্থ হলেন, তখন মুনাফিক ও ইহুদিরা আনন্দিত হয়। অন্যদিকে মুসলমানরা গভীর উদ্বেগে পড়ে যান। কিন্তু হঠাৎই খবর আসে যে তিনি সাময়িকভাবে সুস্থ হয়েছেন। সাহাবায়ে কেরামের মাঝে তখন আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়। তারা দান-খয়রাত করেন, শুকরিয়া আদায় করে নফল নামাজ পড়েন। ঘটনাটি ঘটে সফর মাসের শেষ বুধবার। পরবর্তীকালে এই দিনটিই মুসলিমদের মাঝে 'আখেরি চাহার সোম্বা' নামে পরিচিত বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিনটি বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয়। মুসলিমরা গোসল করে দু'রাকাত নফল শোকরানা নামাজ আদায় করেন, রোগমুক্তির দোয়া পড়েন এবং দান-খয়রাত করেন।

বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা, খানকা ও দরবারে ওয়াজ মাহফিল, জিকির-আজকার, মিলাদ, দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। ঐতিহাসিক ইবনে ইসহাক লিখেছেন, তিনি বাকিউল গারকাদ কবরস্থান থেকে ফেরার পর প্রচণ্ড মাথাব্যথায় আক্রান্ত হন। ইবনে হিশামের মতে, অন্তিম সময়ে তিনি তীব্র শিরপীড়ায় ভুগছিলেন এবং অধিকাংশ সময় অজ্ঞান হয়ে থাকতেন। আবিসিনিয়া থেকে আনা ওষুধেও অবস্থার উন্নতি হয়নি।

এই আশঙ্কাজনক পরিস্থিতির মধ্যে একদিন তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। সাত কুয়োর পানি দিয়ে গোসল করেন, কন্যা ফাতেমা (রা.) ও নাতি হাসান (রা.) ও হোসেনকে (রা.) সঙ্গে নিয়ে আহার করেন। সাহাবায়ে কেরামরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে দান-খয়রাত করেন। হজরত আবু বকর (রা.) পাঁচ হাজার, হজরত উমর (রা.) সাত হাজার, হজরত আলী (রা.) তিন হাজার দিরহাম এবং আবদুর রহমান বিন আউফ (রা.) ১০০ উট দান করেন। হজরত আয়েশা (রা.)-এর বর্ণনা অনুযায়ী, সফর মাসের শেষ বুধবার তিনি হঠাৎ সুস্থ হয়ে ওঠেন, যদিও সন্ধ্যার পর আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেই সাময়িক আরোগ্য লাভের ঘটনাকে মুসলিমরা প্রতি বছর স্মরণ করে আখেরি চাহার সোম্বা হিসেবে পালন করে আসছেন।

পবিত্র আখেরি চাহার সোম্বা ১৪৪৭ হিজরি উপলক্ষে আজ বুধবার বাদ যোহর বেলা দেড়টায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।


অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ) আ. ছালাম খান। এতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নুরানী জামে মসজিদের খতিব ড. মুফতি মাওলানা কামরুল হাসান শাহীন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দাওয়াত ও সংস্কৃতি বিভাগের পরিচালক ড. মোহাম্মদ হারুনূর রশীদ।