ইসলামে সালামের অনেক গুরুত্ব রয়েছে। আরবি সালাম শব্দের অর্থ শান্তি ও দোয়া, কল্যাণ ইত্যাদি। সালাম দিয়ে ইসলামে অভিবাদন জানানো হয়। পাশাপাশি এটি একটি দোয়াও।
চেনা-অচেনা যে কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে সালামের মাধ্যমে অভিবাদন জানানো সুন্নত। এর মাধ্যমে মুসলিম পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ ও শ্রদ্ধা তৈরি হয়। সালাম পরস্পর সম্প্রীতি অক্ষুণ্ন ও সতেজ রাখে। ইসলামের বিধানে সালাম একটি সুন্দর ব্যবস্থা।
সালামের মাধ্যমে ভালোবাসার মজবুত বন্ধন গড়ে ওঠে। হৃদয়ে লালিত হিংসা ও বিদ্বেষ দূর হয়। আল্লাহর রসুল সা. সব সময় আগে সালাম দিতেন। আর সাহাবিদেরও আগে সালাম দিতে উদ্বুদ্ধ করতেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন, যখন তোমাদের সালাম করা হয়, তখন তার চেয়ে উত্তম পন্থায় সালাম (জবাব) দাও অথবা উত্তরে তা-ই বলো। নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রতিটি বিষয়ের হিসাব গ্রহণকারী। (সুরা নিসা ৮৬)
এখানে আল্লাহ তাআলা সালামের পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন। কেউ আসসালামু আলাইকুম’ বললে উত্তরে একটু বাড়িয়ে ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ বলা বা সালামে যতটুকু উল্লেখ করা হয়েছে (ওয়ালাইকুমুস সালাম), ঠিক ততটুকুই উল্লেখ করা উচিত।
আগে সালাম দেওয়ার সবচেয়ে বড় ফজিলত হলো, এর মাধ্যমে সালামদাতার মন থেকে অহংকার দূর হয়। সে আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়। হযরত উমামা রা. থেকে বর্ণিত আছে, রসুল সা. বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর প্রিয় বান্দা হলো ওই ব্যক্তি, যে আগে সালাম দেয়।’ (মিশকাত) অন্য হাদিসে এসেছে, মহানবী সা. বলেন, তোমাদের যে আগে সালাম দেবে, সে অহংকারমুক্ত। (মিশকাত)
আল্লাহর রসুল সা. আরো বলেন, প্রত্যেক কল্যাণমূলক কর্মই হল সদকাহ (করার সমতুল্য)। আর তোমার ভায়ের সাথে তোমার হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা, তোমার বালতির সাহায্যে (কুয়ো থেকে পানি তুলে) তোমার ভায়ের পাত্র (কলসী ইত্যাদি) ভরে দেয়াও কল্যাণমূলক (সৎ)কর্মের পর্যায়ভুক্ত। (আহমাদ, তিরমিজি, হাকেম)
আস্ সালাম হল মহান আল্লাহর অন্যতম নাম। আর সালাম মানে শান্তি। সুতরাং সালাম দিয়ে ও নিয়ে এ দোয়া আই করা হয় যে, আস্-সালাম আল্লাহ তোমার সাথী হোক অথবা তোমার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।
সালাম দেওয়ার মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব রয়েছে ইসলামে। মহান আল্লাহ বলেন,
অর্থাৎ, হে ইমানদারগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য কারো গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে ও তাদেরকে সালাম না দিয়ে প্রবেশ করো না। এটিই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যাতে তোমরা সতর্ক হও। যদি তোমরা গৃহে কাউকে না পাও তাহলে তোমাদেরকে যতক্ষণ পর্যন্ত অনুমতি না দেওয়া হয় ততক্ষণ ওতে প্রবেশ করবে না। আবার যদি তোমাদেরকে বলা হয়, ‘ফিরে যাও’ তবে তোমরা ফিরে যাবে। এটিই তোমাদের জন্য উত্তম। আর তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত। (সুরা নুর ২৭-২৮)
নিজ ঘরেও প্রবেশকালে সালাম দেয়ার গুরুত্ব আরোপ করে মহান আল্লাহ বলেন, فَإِذَا دَخَلْتُمْ بُيُوتًا فَسَلِّمُوا عَلَى أَنْفُسِكُمْ تَحِيَّةً مِنْ عِنْدِ اللَّهِ مُبَارَكَةً طَيِّبَةً كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ
অর্থাৎ, সুতরাং তোমরা যখন ঘরে প্রবেশ করবে, তখন তোমরা তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম করবে অভিবাদন স্বরূপ যা আল্লাহর নিকট হতে কল্যাণময় ও পবিত্র। (সুরা নুর ৬১)
সালামের জবাবে সালাম প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, وَإِذَا حُيِّيتُمْ بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوا بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوهَا إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ حَسِيبًا অর্থাৎ, আর যখন তোমাদেরকে অভিবাদন করা হয়, তখন তোমরাও তা অপেক্ষা উত্তম অভিবাদন করবে অথবা অনুরূপই করবে। (সুরা নিসা ৮৬)
একবার আল্লাহর রসুল সা. বললেন, মুসলিমের উপর মুসলিমের ৬টি হক রয়েছে। জিজ্ঞাসা করা হল, তা কি কি হে আল্লাহর রসুল? বললেন, যখন তার সাথে দেখা হবে, তখন তাকে সালাম দেবে। মুসলিম (আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা ২১৬২)
রসুল সা. বলেন, হে মানুষ! তোমরা সালাম প্রচার কর, অন্নদান কর, জ্ঞাতি-বন্ধন অক্ষুণ্ন রাখ এবং লোকেরা যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন তোমরা নামায পড়। এতে তোমরা নির্বিঘ্নে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, তারগিব ৬১০)