ইসলামের ইতিহাসে প্রথম শহীদ এবং প্রথম মহিলা শহীদ হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত (রা.)। ইসলামের দাওয়াতের সূচনাকালে ইসলাম গ্রহণের কারণে তাকে মক্কার কুরাইশদের নির্মম অত্যাচারের শিকার হতে হয়। এবং শেষ পর্যন্ত আবু জাহেলের হাতে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।
সুমাইয়া ছিলেন ইয়াসির ইবনে আমিরের স্ত্রী এবং প্রখ্যাত সাহাবী আম্মার ইবনে ইয়াসিরের মাতা। তাদের পুরো পরিবারই প্রথম ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন।
শুরুর দিকে সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত মক্কার আবু হুজাইফা বিন আল-মুগীরা আল মাখযুমীর দাসী ছিলেন। তিনি ছিলেন আবিসিনীয় (বর্তমান ইথিওপিয়া) কৃষ্ণাঙ্গ দাসী।
অন্যদিকে, তাঁর স্বামী ইয়াসির ইবনে আমির ইয়েমেনের মাজহাজ গোত্রের আনসী শাখার সন্তান ছিলেন। ইয়াসির মক্কায় এসে আবু হুযাইফা ইবনে আল মুগীরা আল মাখযুমীর সাথে মৈত্রী চুক্তিতে আবদ্ধ হন। আবু হুজাইফা তাঁর দাসী সুমাইয়াকে ইয়াসিরের সাথে বিবাহ দেন এবং এই ঘরেই আম্মার ইবনে ইয়াসিরের জন্ম হয়।
বার্ধক্যের কারণে দুর্বল হয়ে পড়ার সময় মক্কায় ইসলামের দাওয়াতের সূচনা হলে সুমাইয়া প্রথমভাগেই স্বামী ইয়াসির ও ছেলে আম্মার ইবনে ইয়াসিরসহ গোপনে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং পরে প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন।
ইমাম আহমাদ ও ইবনে মাজাহ আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণনা করেন, সর্বপ্রথম যে সাতজন প্রকাশ্যে ইসলামের ঘোষণা দান করেন, সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত ছিলেন তাঁদের অন্যতম।
ইসলাম গ্রহণের ঘোষণার পর সুমাইয়া ও তাঁর পরিবার কুরাইশদের অত্যাচারের রোষানলে পড়ে। যেহেতু তাঁরা বহিরাগত এবং দাস ছিলেন, মক্কায় তাঁদের সাহায্য করার কেউ ছিল না। আবু জাহেল ও তার সঙ্গী কুরাইশরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই পরিবারের ওপর নির্মম অত্যাচার চালাতো।
কুরাইশরা তাদের পরিবারের সকলকে লোহার বর্ম পরিয়ে প্রচণ্ড রোদে দাঁড় করিয়ে রাখতো।
হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁদের এই অসহায় অবস্থা দেখে সান্ত্বনা দিতেন এবং বলতেন, হে ইয়াসিরের পরিবারবর্গ ধৈর্য ধর! তোমাদের জন্য জান্নাত নির্ধারিত রয়েছে।
প্রতিদিনের মতো সারাদিন অত্যাচার সহ্য করে বাড়ি ফেরার পর এক সন্ধ্যায় আবু জাহেল অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করার একপর্যায়ে সুমাইয়ার দিকে বর্শা ছুড়ে মারে। ৬১৫ খ্রিস্টাব্দে এই মহীয়সী নারী ইসলামের ইতিহাসে প্রথম শহীদ হিসেবে শাহাদাত লাভ করেন। তাঁর স্বামী ইয়াসির ইবনে আমির এবং ছেলে আব্দুল্লাহ ইবনে ইয়াসিরও এই অত্যাচারের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।