সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে-বিদেশে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড বেড়েই চলেছে। বাসা-বাড়ি থেকে শুরু করে বাজার, হাসপাতাল কিংবা বিমানবন্দরের গুদামে আগুন লাগার ঘটনা একদিকে যেমন জানমালের বিপুল ক্ষতি ডেকে আনছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের মনে সৃষ্টি করছে ভয় ও অনিশ্চয়তা।
এই বাস্তবতায় নতুন করে গুরুত্ব পাচ্ছে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর আগুন প্রতিরোধে দেওয়া কিছু নির্দেশনা, যা শুধু আধ্যাত্মিক উপদেশ নয় বরং বাস্তবিক জীবনেও কার্যকর ও সময়োপযোগী সুরক্ষা নির্দেশনা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
চলুন জেনে নেয়া যাক অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে মহানবী (সা.) এর ৫টি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা-
আগুন জ্বালিয়ে রেখে ঘুমানো নিষেধ
রাসুলুল্লাহ (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন, রাতে আগুন জ্বালিয়ে রেখে তোমাদের ঘরে ঘুমিও না। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২০১৫)। এই হাদিসের মূল শিক্ষা হলো, আগুন জ্বালিয়ে রেখে ঘুমালে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বর্তমান সময়ে গ্যাসের চুলা, বৈদ্যুতিক হিটার, বা অন্যান্য উত্তপ্ত যন্ত্র চালু রেখে ঘুমানোর বিষয়ে এটি কঠোর সতর্কতা।
বাতি বা প্রদীপ নিভিয়ে রাখা
হাদিসে এসেছে, রাতে ঘুমানোর আগে প্রদীপ নিভিয়ে ফেলো। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৯১৮)। এই নির্দেশনাটি আধুনিক যুগে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের ঝুঁকি প্রতিরোধের শিক্ষাও দেয়। ঘরে বা অফিসে বিদ্যুৎ সরঞ্জাম ব্যবহারের পর প্লাগ খুলে রাখা এই নির্দেশনার আধুনিক প্রতিফলন।
শিশু ও দুর্বলদের আগুনের কাছ থেকে দূরে রাখা
রাসুল (সা.) শিশুদের নিরাপত্তার ব্যাপারে বিশেষভাবে সতর্ক করে বলেছেন, শিশুদের আগুনের কাছ থেকে দূরে রাখো, কারণ আগুন শয়তানের মতো শত্রু। (আদবুল মুফরাদ, ইমাম বুখারি)। এটি ঘরে মোমবাতি, আগরবাতি, গ্যাসের চুলা বা লাইটারের ব্যবহার করার সময় শিশুরা যাতে সেগুলোর নাগাল না পায়, সেই বিষয়ে সচেতন থাকার আহ্বান জানায়।
ঘরের গ্যাস ও আগুনের উৎস পরীক্ষা করা
আরেকটি হাদিসে মহানবী (সা.) বলেছেন, তোমাদের ঘরে আগুন রেখে রাত কাটিও না; হয় তা নিভিয়ে দাও, নয়তো ঢেকে রাখো। (সহিহ মুসলিম)। এটি শুধু আগুন নেভানো নয়, বরং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার আহ্বান। আধুনিক প্রেক্ষাপটে এটি বোঝায় ঘুমানোর আগে গ্যাসের চুলা, সিলিন্ডার, ইলেকট্রিক যন্ত্র ও তারের সংযোগ পরীক্ষা করা উচিত।
আল্লাহর কাছে নিরাপত্তার দোয়া করা
প্রতিটি বিপদ থেকে বাঁচতে মহানবী (সা.) আল্লাহর নিকট দোয়া করতেন এবং শিখিয়েছেন, হে আল্লাহ! তুমি আমাদের আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করো এবং আগুনের বিপদ থেকে নিরাপদ রাখো। এই দোয়া শুধু আধ্যাত্মিক সুরক্ষা নয়, বরং পার্থিব জীবনে অগ্নিকাণ্ড থেকে নিরাপদ থাকার জন্য এক আত্মিক আশ্রয়।