থার্টি ফার্স্ট নাইট সম্পর্কে ইসলাম যা বলে

আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৫ পিএম

আজ ৩১ ডিসেম্বর। রাত ১২টার কাঁটা স্পর্শ করতেই শুরু হবে ২০২৬ সাল। ক্যালেন্ডার বদলের এই ক্ষণে তথাকথিত ‘থার্টিফার্স্ট নাইট’ উদযাপনের নামে দেশজুড়ে চলছে আতশবাজি, পটকা, ফানুস ও ডিজে পার্টির প্রস্তুতি। 

প্রতিবছর থার্টি ফার্স্ট নাইটে কোনো না কোনো দুর্ঘটনা ঘটে। মানুষ ছাড়াও এই পৃথিবীতে আরও অসংখ্য পাখি ও প্রাণী আছে, যাদের জীবন ও অনুভূতির কথা আমরা খুব কমই ভাবি। তাদের চোখে থার্টি ফার্স্ট নাইট কোনো উৎসব নয়; বরং এক ভয়ংকর রাত। প্রতি বছর উৎসবের নামে এমন আস্ফালন ইসলাম ও রাষ্ট্রীয় আইন উভয়ের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ।

ইসলামের মৌলিক নীতি: ক্ষতি করা হারাম
ইসলামের মৌলিক বিধান হলো- ‘লা দারার ওয়া লা দিরার’ অর্থাৎ অপরের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না এবং অপরের ক্ষতিও করবে না। (ইবনে মাজাহ ২৩৪১; সহিহুল জামে: ৭৫১৭)

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা নিজেদের হত্যা করো না।’ (সুরা নিসা: ২৯)

রাষ্ট্রীয় আইনও একই
বাংলাদেশের শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ এবং হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী, অনুমোদন ছাড়া আতশবাজি ও পটকা ফোটানো দণ্ডনীয় অপরাধ। অর্থাৎ ইসলামি শরিয়ত ও রাষ্ট্রীয় আইন উভয়ই জনকল্যাণ, নিরাপত্তা ও সামাজিক শান্তির পক্ষে।

ইসলামে যা বর্জনীয়
বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুকরণ: রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন- ‘যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে (কেয়ামতে) তাদেরই অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৪০৩১)

অনর্থক, অপচয়মূলক ও ক্ষতিকর কাজ: হাদিসে এসেছে, ‘ব্যক্তির ইসলামের সৌন্দর্য হলো অনর্থক বিষয় ত্যাগ করা।’ (জামে তিরমিজি: ২৩১৮)
আল্লাহ তাআলা অপচয়কারী সম্পর্কে বলেন, ‘নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ২৭)

শব্দদূষণ ও অন্যের কষ্টদান: হজরত ওমর (রা.)-এর যুগে এক ব্যক্তি মসজিদে নববিতে উচ্চস্বরে ওয়াজ করায় হজরত আয়েশা (রা.)-এর ইবাদতে বিঘ্ন ঘটে। বিষয়টি জানতে পেরে ওমর (রা.) তাকে নিষেধ করেন এবং শাস্তি দেন। (আখবারু মদিনা: ১/১৫)

নতুন বছরে মুমিনের করণীয়
আত্মসমালোচনা: রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন- ‘বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি, যে নিজের পর্যালোচনা করে এবং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেয়।’ (জামে তিরমিজি: ২৪৫৯)

তাওবা ও ইস্তেগফার: আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘আর যারা কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেললে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে… (তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত)।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৩৫)

নেক আমলের পরিকল্পনা: আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘হে ঈমানদাররা, আল্লাহকে ভয় করো এবং প্রত্যেকের উচিত আগামীর জন্য সে কী করেছে তা খতিয়ে দেখা।’ (সুরা হাশর: ১৮)

কল্যাণের জন্য দোয়া: সাহাবায়ে কেরাম বছরের শুরুতে এই দোয়াটি পড়তেন- ‘আল্লাহুম্মা আদখিলহু আলাইনা বিল-আমনি, ওয়াল ইমানি, ওয়াস সালামাতি, ওয়াল ইসলামি, ওয়া রিদওয়ানিম মিনার রাহমানি, ওয়া ঝাওয়ারিম মিনাশ শায়ত্বান।’ অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের ওপর এই সময়কে নিরাপত্তা, ঈমান, সুস্থতা ও ইসলামসহ প্রবেশ করাও। দয়াময় রহমানের সন্তুষ্টি দান করো এবং শয়তানের ক্ষতি থেকে আমাদের রক্ষা করো। (আল মুজামুল আওসাত: ৬/২২১)

থার্টিফার্স্ট নাইটের নামে যে উদযাপন আতঙ্ক, মৃত্যু ও ধ্বংস বয়ে আনে, ইসলাম তা কখনো ‘আনন্দ’ বলে স্বীকৃতি দেয়নি। মুমিনের প্রকৃত আনন্দ নিহিত আল্লাহর আনুগত্যে ও ইবাদতের মাধুর্যে। নতুন বছর হোক আত্মশুদ্ধি, তাওবা ও নেক আমলের প্রতিযোগিতার সূচনা। অপসংস্কৃতির এই ঢেউ থেকে দূরে থেকে নতুন বছর শুরু হোক তাহাজ্জুদ, ইস্তেগফার ও পরিকল্পিত ইবাদতের মাধ্যমে।

FJ
আরও পড়ুন