হাশরের ময়দানে আরশের ছায়ায় আশ্রয় পাবেন যারা

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, সাত শ্রেণির লোককে আল্লাহ তায়ালা (হাশরের দিন) তার আরশের ছায়ায় স্থান দান করবেন। সেদিন আরশের ছায়া ছাড়া আর অন্য কোনো ছায়া থাকবে না।

 আরশের ছায়ায় আশ্রয় পাবেন যে ৭ শ্রেণির লোক-

১) ন্যায়পরায়ণ নেতা।

২) ওই যুবক যে তার যৌবনকাল আল্লাহর ইবাদতে কাটিয়েছেন।

৩) এমন ব্যক্তি (মুসল্লি) যার অন্তর মসজিদের সঙ্গে লাগানো থাকে, একবার মসজিদ থেকে বের হলে পুনরায় প্রত্যাবর্তন না করা পর্যন্ত ব্যাকুল থাকে।

৪) এমন দুই ব্যক্তি যারা একমাত্র আল্লাহকেই ভালোবেসে পরস্পর মিলিত হয়, এমনকি পরস্পর আলাদা হয়।

৫) যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহর ভয়ে অশ্রু বিসর্জন দেয়।

৬) যে ব্যক্তিকে কোনো সম্ভ্রান্ত বংশের সুন্দরী নারী ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার আহবান জানায় আর ওই ব্যক্তি শুধু আল্লাহর ভয়েই বিরত থাকে।

৭) যে ব্যক্তি এত গোপনে দান করে যে তার ডান হাত কি দান করলো বাম হাতও জানলো না। 

(বুখারি, হাদিস নম্বর ১৭৪; মুসলিম, হাদিস নম্বর ১৭১২)


হাশরের দিন আল্লাহর আরশের ছায়া ছাড়া আর অন্য কোন ছায়া থাকবে না। সেদিন মানুষ দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করবে। মা তার সন্তানকে চিনবে না। সন্তান তার বাবা-মাকে চিনবে না। 

পবিত্র কুরআনের সুরা আবাসা’র ৩৪-৩৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘সেদিন মানুষ নিজের সন্তানকে রেখে পালিয়ে যাবে। তাদের মধ্যে প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর সেদিন এমন বিপদ নেমে আসবে যে, তখন নিজেকে ছাড়া আর কারও দিকে তাকানোর মতো অবস্থা থাকবে না’।

হাদিসে বর্ণিত আছে, হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন ‘মহানবী (সা.) কে বলতে শুনেছি, কেয়ামতের দিন মানুষ উলঙ্গ হয়ে খতনাহীন অবস্থায় কবর থেকে হাশরের ময়দানে এসে দাঁড়াবে। এ কথা শুনে আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! নারী-পুরুষ সবাই কি উলঙ্গ থাকবে? এমন হলে তো খুবই লজ্জার ব্যাপার। উত্তরে হুজুর (সা.) বললেন, হে আয়েশা! সে দিনের পরিস্থিতি এত ভয়ঙ্কর হবে, কেউ কারও দিকে তাকানোর কথা কল্পনাও করতে পারবে না।’ (বুখারি ও মুসলিম)

কেয়ামতের ভয়াবহতা উল্লেখ করে পবিত্র কুরআনের সুরা আল ইমরান এর ১০৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘ওই দিন কিছু চেহারা উজ্জ্বল হবে, আর কিছু লোকের চেহারা হবে কালো।’ অর্থাৎ কাল হাশরের ময়দানে যারা ইমানদার হবেন তাদের চেহারা উজ্জ্বল হবে, তারাই হবে সফলকাম। অন্যদিকে আল্লাহর অবাধ্য বান্দা অর্থাৎ যাদের আমলনামা পেছনের দিক দিয়ে দেয়া হবে তাদের চেহারা হবে কালো, কুৎসিত।

তাদের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনের সুরা আর রাহমানের ৪১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘অপরাধীরা সেদিন নিজ নিজ চেহারা দ্বারাই চিহ্নিত হয়ে যাবে এবং তাদের কপালের চুল ও পা ধরে টেনে-হিঁচড়ে নেয়া হবে।’

সব প্রাণীর দুনিয়ার জুলুমের প্রতিশোধ প্রতিবিধান করা হবে কিয়ামতের মাঠে। জীবজন্তুদের বিচারের পর বলা হবে ‘তোমরা মাটি হয়ে যাও’। তখন তারা সবাই মাটিতে মিশে যাবে। মানুষ এ দৃশ্য দেখবে। পাপী মানুষরা যখন সামনে কঠিন বিপদ-মসিবত দেখবে, তখন বলবে, ‘হায়! আমিও যদি মাটি হয়ে যেতাম, তাহলে কতই না ভালো হতো!’ (সুরা নাবা, আয়াত নম্বর ৪০)