আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা ঈমানের শক্তি

আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৩০ পিএম

আধুনিক জীবনের তীব্র চাপ ও প্রতিযোগিতায় মানুষ আজ হতাশা (ডিপ্রেশন) ও উৎকণ্ঠার ভারে নুয়ে পড়ছে। কিন্তু ইসলাম ধর্ম কোরআন ও সুন্নাহর মাধ্যমে বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আল্লাহর ওপর ভরসা (তাওয়াক্কুল) রাখা কেবল একটি অনুভূতি নয়, বরং এটি ঈমানের শক্তি যা মানুষকে কঠিনতম সময়েও নির্ভার থাকতে শেখায়।

প্রত্যাশা বা আশা মানে ভালো কিছুর প্রত্যাশা করা এবং যুক্তিসঙ্গত আত্মবিশ্বাস নিয়ে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়া। ইসলামের দৃষ্টিতে, প্রত্যাশা বা আশা সেই আত্মিক শক্তি, যা মানুষকে ভয়, দুশ্চিন্তা ও বিপর্যয়ের মধ্যেও টিকে থাকতে শেখায়।

বর্তমানে ব্যস্ত জীবনে আমরা প্রায়ই প্রত্যাশা ও ভরসা রাখতে ভুলে যাই। কারণ পার্থিব ব্যস্ততা আমাদের আল্লাহর ওপর ভরসা রাখার সুযোগ সংকুচিত করে দিচ্ছে। অথচ আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্য হতাশার বিপরীতে অফুরন্ত আশার দুয়ার খুলে রেখেছেন। যখন হতাশা গ্রাস করতে চায়, তখন মনে রাখতে হবে আল্লাহ আমাদের তার ওপর ভরসা করতে, তার ক্ষমা ও রহমতের আশা রাখতে বলেছেন।

ইসলামের শিক্ষা হলো, ঈমানদার ব্যক্তি সব সময় ভালো পরিণতির প্রত্যাশা করবে। আল্লাহর নির্দেশনা অনুসরণ করবে। এতে কল্যাণ আসবেই।

আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি জানেন জীবনের কোনো কোনো পর্যায়ে মানুষ হতাশ হয়ে পড়তে পারে। তাই কোরআন ও হাদিসে বারবার বলা হয়েছে, আল্লাহর রহমত, দয়া ও ক্ষমা থেকে কখনো নিরাশ হওয়া যাবে না।

মানুষ কেন ভরসা হারায়?

অনেক সময় পাপবোধ মানুষকে হতাশ করে তোলে। পাপ করলে অনুশোচনা আসে, নিজের ওপর হতাশা জন্ম নেয়। বারবার এই অনুভূতি জমতে জমতে মানুষ ভাবতে শুরু করে আল্লাহ বুঝি তাকে ক্ষমা করবেন না। এই গভীর অন্ধকার অনুভূতিই শয়তানের সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র। হতাশার মাধ্যমে সে মানুষকে আল্লাহ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।

কিন্তু আল্লাহ বলেন, বান্দা যেমন আমার সম্পর্কে ধারণা করে, আমি তার সঙ্গে তেমনই আচরণ করি। বান্দা যদি আমার দিকে এক কদম এগোয়, আমি তার দিকে আরও দ্রুত এগিয়ে যাই। এই বাণী বিশ্বাসীকে আশার সর্বোচ্চ শিক্ষা দেয়।

পাপ যত বড়ই হোক, রহমত তার চেয়েও বড়

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবিরা ফেরেশতা ছিলেন না। তারাও মানুষ ছিলেন, ভুল করেছেন, পাপও করেছেন। তবে তারা জানতেন আল্লাহর ক্ষমার দরজা সব সময় খোলা। এমন কোনো পাপ নেই, যা আল্লাহর রহমতের চেয়ে বড়।

এমনকি ফেরাউনের মতো সীমালঙ্ঘনকারী ব্যক্তির কাছেও আল্লাহ মুসা আলাইহিস সালামকে নরম ভাষায় কথা বলতে বলেছেন, এর কারণে হয়তো সে অনুতপ্ত হবে। তাহলে আমাদের পাপ কীভাবে আল্লাহর ক্ষমার বাইরে হতে পারে?

কোরআনে আল্লাহ স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন, হে আমার বান্দারা, যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করেন। আর যারা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়, তারা মূলত অবিশ্বাসীদের পথেই হাঁটে।

দুশ্চিন্তা, হতাশা থেকে মুক্তির পথ

বর্তমানে সবচেয়ে বড় রোগগুলোর একটি হলো মানসিক চাপ ও হতাশা। কিন্তু এটি নতুন কিছু নয়। ইতিহাসের শুরু থেকেই মানুষ পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছে, আর নবী-রাসুলরা মানুষকে আশা ও ভরসার শিক্ষা দিয়েছেন।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ তার সব দুশ্চিন্তা দূর করে দেন এবং অজানা উৎস থেকে তাকে রিজিক দান করেন। তিনি আরও বলেছেন, দোয়া করো এবং দৃঢ় বিশ্বাস রাখো আল্লাহ দোয়া কবুল করবেন।

উদ্বেগ ও হতাশা দূর করতে রাসুল (সা.) যে দোয়াটি শিখিয়েছেন, তা আজও সমান প্রাসঙ্গিক। দোয়াটি হলো, আল্লাহর কাছে দুশ্চিন্তা, অলসতা, ভয়, ঋণের বোঝা ও মানুষের আধিপত্য থেকে আশ্রয় প্রার্থনা।

কষ্টের পরই স্বস্তি

কোরআনে বারবার বলা হয়েছে, প্রত্যেক কষ্টের সঙ্গেই রয়েছে স্বস্তি। মানুষকে ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ ও প্রাণহানির মাধ্যমে পরীক্ষা করা হবে। তবে ধৈর্যশীলদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ।

এই দুনিয়ার জীবন পরীক্ষা ও চ্যালেঞ্জে ভরা। কিন্তু সেগুলো মোকাবিলা করতে হবে ধৈর্য ও আশার সঙ্গে। আশা মানুষকে অন্ধকার পেরিয়ে আলোয় পৌঁছে দেয়, আর হতাশা কেবল পথ দীর্ঘ করে।

আল্লাহ অতি দয়ালু। পৃথিবীতে আমরা যে মায়ের মমতা, রোগীর সেবা, খরায় বৃষ্টির ধারা দেখি, সবই আল্লাহর রহমতের এক শতাংশ মাত্র। বাকি ৯৯ শতাংশ তিনি কিয়ামতের দিনের জন্য সংরক্ষণ করে রেখেছেন। এটিই আশার সবচেয়ে বড় কারণ।

চাপ ও দুশ্চিন্তা কখনো কখনো গভীর হতাশায় রূপ নিতে পারে, যাকে আজ আমরা বিষণ্নতা বলি। এমন অবস্থায় চিকিৎসকের সহায়তা নেওয়াও আল্লাহর রহমতের অংশ এবং  একইসঙ্গে আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়া, ক্ষমা চাওয়া কর্তব্য।

NB/AHA